আপনারা যারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যেতে চাচ্ছেন, তাদের মধ্যে অনেকে জানতে চাচ্ছেন কক্সবাজার বিচের নাম। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অনেক গুলো বিচ রয়েছে। প্রত্যেটটি বিচের নিজস্ব নাম ও আলাদা সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত এবং জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত। যার দৈর্ঘ ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল)।
আপনারা যারা বন্ধু-বান্ধব বা পরিবার নিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘুরতে যাবেন তারা অবশ্যই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অন্যান্য বিচ গুলোতে ঘুরতে যাবেন। কারণ প্রত্যেকটি বিচের প্রকৃতিক সৌন্দর্য ভিন্ন ভিন্ন।
কক্সবাজার বিচের নাম
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অনেক গুলো বিচ রয়েছে। এই বিচ গুলো হলো: ইনানী বিচ, কলাতলী বিচ, সুগন্ধা বিচ, লাবনী বিচ, বেস্টওয়ে লং বিচ, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, পাটুয়ারটেক বিচ, সোহানখালী বিচ ও দরিয়ানগর বিচ।
ইনানী বিচ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিচ গুলোর মধ্যে ইনানী বিচ একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। এই বিচকে পর্যটন সেক্টরে ইমারজিং টাইগার বলা হয়। ইনানী বিচ প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২০০ মিটার প্রস্থ। এখানে প্রবাল প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত বলে সমুদ্রে সাঁতার কাটার জন্য নিরাপদ স্থান।
এই বিচে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক জীব রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তিমি, ডলফিন ও কচ্ছপ। বার্ড-ওয়াচিং স্পট এর জন্য জনপ্রিয় ইনানী বিচ অনেক জনপ্রিয় একটি স্থান। কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে ইনানী বিচ যেতে পারবেন।
কলাতলী বিচ
কলাতলী বিচ বা সমুদ্র সৈকত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত গুলোর মধ্যে একটি। এটি কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরত্ব অবস্থিত।
এই বিচ ওয়াটার স্পোর্টস, সাঁতার কাটা, সূর্যস্নান করার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। এখানকার স্থানীয় বাজারে স্থানীয় কারুশিল্পের আকর্ষনীয় সব জিনিসপত্র পাবেন। এছাড়া হোটেল, রেস্টুরেন্টে রয়েছে সেখানে দেশি ও আন্তর্জাতিক মানের খাবার পাবেন।
সুগন্ধা বিচ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে যতগুলো বিচ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও পর্যটক পাবেন সুগন্ধা বিচে। এখানে সূর্যস্নান, সমুদ্রে স্পিড চালানো, ঘোড়ার চড়ে সৈকত ভ্রমন, ঝাউবন ঘোরাঘুরি সহ সব কিছু পাবেন এই বিচে।
তাছাড়া সুগন্ধা বিচের একবারে পাশে থাকার জন্য হোটেল এবং খাওয়া জন্য রেস্টুরেন্টে পেয়ে যাবেন। কেনাকাটা করার জন্য বিচের পাশে বারমিস মার্কেট গুলো থেকে কম দামে অনেক সুন্দর জিনিসপত্র কিনতে পারবে।
লাবনী বিচ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান গুলোর জন্য লাবনী বিচ অন্যতম। ইনানী বিচের পাশেই লাবনী বিচ অবস্থিত। এখানে মনোরম পরিবেশে সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন।
১৯১৩ সালে এখানে একটি লাইটহাউজ নির্মিত করা হয়েছিল। এই লাইটহাউজ পর্যটকদের কাছে অনেক আকর্ষণীয় একটি স্থান। লাবনী বিচের আশেপাশে মনোরম দৃশ্য দেখতে পাবেন। এছাড়া পিকনিক করার জন্য এখানে পিকনিক স্পট, দোকান, রেস্টুরেন্টে, হোটেল রয়েছে।
বেস্টওয়ে লং বিচ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের একটি জনপ্রিয় স্থান বেস্টওয়ে লং বিচ। এটি কলাতলী বিচ থেকে ৫৪ কিলোমিটার দূরে মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে অবস্থিত। এই বিচের দৈর্ঘ প্রায় ২ কিলোমিটার।
এখানে সাদা বালি, সমুদ্রের পরিস্কার নীল জলরাশি রয়েছে। সূর্যস্নান, ওয়াটার স্পোর্টস, প্যারাসেলিং, জেট স্কিইং, স্পিড বোটে চড়া এবং সাঁতার কাটার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
মারমেইড বিচ রিসোর্ট
মারমেইড বিচ রিসোর্ট কক্সবাজারের রামুতে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য যারা একটি নিরিবিলি সৈকতে সময় কাটাতে চান তাদের জন্য সেরা স্থান এটি। কারণ এখানে পর্যকটদের সংখ্যা খুবই কম, বলা যায় জনশূন্য।
এখানে নীল সমুদ্রের জলরাশি, পরিস্কার পানি এবং সাদা বালির জন্য পর্যটকদের আকর্ষন টানে। এই বিচে সাঁতার কাটা, সূর্যস্নান করা এবং ওয়াটার স্পোর্টস এর জন্য জনপ্রিয় স্থান। এছাড়া এখানে একটি বার, একটি রেস্তোরাঁ এবং বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে।
সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ৪০ মিনিট দূরে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা অবস্থিত। বিশ্রামের জন্য এটি একটি বিলাসবহুল থাকার স্থান। এখানে রাত্রিযাপন করার পাশাপাশি, সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার এবং স্পা ব্যবস্থা রয়েছে।
এই রিসোর্টের নিজস্ব ৬০ হাজার বর্গফুটের বিশাল সমুদ্র সৈকত রয়েছে। সেখানে বসে পূর্ব দিকের সবুজ পাহাড়, নীল দিগন্ত সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এই রিসোর্টটি পরিবার, নব দম্পতি এবং ব্যবসায়ীদের জন্য জনপ্রিয় একটি স্থান।
পাটুয়ারটেক বিচ
ইনানী বিচ থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে পাটুয়ারটেক বিচ অবস্থিত। নিরিবিলি, কোলাহলশুন্য সমুদ্র সৈকতে ঘোরাঘুরি করার জন্য এই বিচটি অনেক জনপ্রিয়। কক্সবাজারের অন্যান্য বিচের তুলনায় এই বিচের পরিবেশ তুলনামূলক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।
এখানে কিছু কিছু জায়গায় বিভিন্ন আকারের নুড়ি-পাথর এবং ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়া দেখতে পাবেন। বিচে ঘুরে বেড়ানোর জন্য কোয়াড মোটরগাড়ি ও ঘোড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
সোহানখালী বিচ
কলাতলী বিচ থেকে মাত্র ৩৬ কিলো দূরে সোহানখালী বিচ অবস্থিত। এখানে শত শত জেলেদের নৌকা বা রঙিন সাম্পান গুলো সমুদ্রের বিচ আরো সৌন্দর্যময় করে তোলেছে।
নিরিবিলি সৈকত যাদের পছন্দ তারা এখানে সময় কাটাতে পারবেন। এই বিচের অবস্থান লোকালয় থেকে বেশ কিছুটা দূরে হওয়ায় দিনের বেলা এখানে ঘুরতে যাওয়া ভালো।
দরিয়ানগর বিচ
কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার কক্সবাজার টু টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে দরিয়ানগর বিচ অবস্থিত। যারা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একটি নিরিবিলি পরিবেশে সমুদ্র দেখতে চান তাদেন জন্য সেরা স্থান দরিয়ানগর সমুদ্র সৈকত।
বর্তমানে এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল প্যারাসেইলিং ও ৩৭ একরের বিশাল পাহাড়, যাতে হাইকিং ট্রেল রয়েছে। এখানে আরো আকর্ষণীয় হলো শাহেনশাহ গুহা, যা প্রায় হাফ কিলোমিটার লম্বা।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর বিচ কোনটি
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সবগুলো বিচ সুন্দর। একেকটা একেক ভাবে সুন্দর। তবে, পর্যটকদের চাহিদা অনুসারে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে সুন্দর ও জনপ্রিয় হল সুগন্ধা বিচ বা সুগন্ধা সমুদ্র সৈকত।
আরো পড়ুন