ঐতিহ্যবাহী টিকইল আলপনা গ্রাম (Alpona Village) বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলায় অবস্থিত। হিন্দু-অধ্যুষিত এই গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়ির দেয়ালে হাতে আঁকা নানা আলপনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গ্রামের এই বৈশিষ্ট্যের কারণে দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষের কাছে আলপনা গ্রাম নামে সুপরিচিত পেয়েছে।
টিকইল আলপনা গ্রামের গোড়াপত্তন কিভাবে হয়েছিলো তার সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও পূর্বপুরুষের হাত ধরে এই গ্রামের বাসিন্দারা তাদের এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। উৎসব, পূজা বা আনন্দময় পরিবেশ উপলক্ষে গ্রামের গৃহবধূ ও মেয়েরা ঘরের দেয়ালে আলপনার কাজটি করেন। আল্পনা আঁকার মাধ্যমে তারা বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনের সাথে দেবতার আশীর্বাদ কামনা করেন।
আলপনা আঁকার জন্য তারা নিজেদের তৈরি রং ব্যবহার করে এবং এই রঙের কাঁচামাল মাটি থেকে নেওয়া হয়। এক সময় আলপনা আঁকার জন্য তারা চক, রং, গিরিমাটি ও তারপিন তেল ব্যবহার করতেন। কিন্তু এই আলপনার স্থায়িত্ব কম থাকায় বর্তমানে শুকনা বরই চুর্ণ আঠা, চকগুঁড়া, বিভিন্ন রং, গিরিমাটি, আমের পুরাতন আঁটির শাঁস চুর্ণ ও কলা ও মানকচু গাছের কসের মিশ্রণকে ৪-৫ দিন ভিজিয়ে রেখে আলপনার রং তৈরি করা হয়। এই রং দিয়ে আলপনা প্রায় এক বছরের বেশি সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়।
মজার বিষয় হলো এই আল্পনা গ্রামে আগের দিনে বাড়িঘরে আঁকা আল্পনার মাধুর্য দেখে গুরুজনেরা উক্ত বাড়ির বর-কনে পছন্দ করতো। টিকইল গ্রামবাসী মনে করে আগামী প্রজন্মেও তাদের এই ঐতিহ্য টিকে থাকবে।
আলপনা গ্রাম কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে চড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দূরত্ব ২৯৬ কিলোমিটার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আলপনা গ্রামের দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার।
ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ পরিবহন, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, এভারগ্রীন ট্রান্সপোর্ট, শ্যামলী পরিবহন, একতা ইন্টারপ্রাইজ, কেটিসি হানিফ সহ চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী যেকোনো বাসে চড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারবেন। এসি নন-এসি বাস ভেদে ভাড়া ৮৫০ থেকে ১,৫০০ টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর বা বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি করে আল্পনা গ্রামে যেতে পারবেন।
এছাড়া ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে শুক্রবার বাদে বাকি ৬ দিন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারবেন। ট্রেনের সিট ভেদে ভাড়া ৫১৫ থেকে ১,১৭৩ টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে নাচোল উপজেলায় থেকে পারবেন। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে বাস, সিএনজি করে আলপনা গ্রাম যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
খাবার জন্য নাচোল উপজেলায় মোটামুটি মানের খাবার হোটেল আছে। যারা ভালো মানের খাবার খেতে চান তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর গিয়ে খেতে পারেন। সেখানে ক্যাফে ভিলেজ, শরিফা হোটেল, আলাউদ্দিন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, ভাই ভাই হোটেল থেকে ভালো মানের খাবার খেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য নাচোল উপজেলায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে থাকার জন্য মোটামুটি মানের আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে স্কাই ভিউ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল রোজ, হোটেল স্বপ্নপুরী, হোটেল রংধনু, হোটেল আল নাহিদ, হোটেল মহনন্দা, নবাবগঞ্জ বোডিং উল্লেখযোগ্য। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আবাসিক হোটেল সমূহের তথ্য জানুন।
এছাড়া যারা ভালো মানের হোটেলে থাকতে চান তারা রাজশাহী শহরের চলে যাবেন। সেখানে ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, নাইস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হক্স ইন, মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল হোটেল ৫০০ থেকে ৪,০০০ টাকায় থাকতে পারবেন।
রাজশাহী শহরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল আছে। সেখানে ১,৯০০ থেকে ৪,৫০০ টাকায় এসি নন-এসি রুমে থাকতে পারবেন।
আশেপাশের আরো দর্শনীয় স্থান
আল্পনা গ্রাম ঘুরে দেখার পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলার ছোট সোনা মসজিদ, কানসাট আম বাজার, দারাসবাড়ি মসজিদ, কানসাট জমিদার বাড়ি একদিনে ঘুরে দেখতে পারেন।
সর্তকতা
- আল্পনা গ্রামের মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
- গ্রামের মানুষের সমস্যা হয় এমন কোনো কর্মকান্ড করবেন না।
- ছবি বা ভিডিও করার আগে তাদের অনুমতি নিবেন।
- গ্রামটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন তাই যেখান-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না।
