১৮ শতকে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী কান্তজির মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে ও দিনাজপুর-তেতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত। এই মন্দিরটি স্থানীয়দের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত, কেউ বলে কান্তজীউ মন্দির (Kantajew Temple), কেউ বলে কান্তনগর মন্দির আবার কেউ বলে নবরত্ন মন্দির।
মধ্যযুগীয় এই হিন্দু মন্দিরটি মহারাজা প্রাণনাথ রায় শ্রীকৃষ্ণ ও তার স্ত্রী রুক্মিণীকে উৎসর্গ করে নির্মাণ করেন। সুদূর পারস্য থেকে নির্মাণ শিল্পীদের এনে পোড়ামাটির ফলকে দেয়ালের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রামায়ণ, মহাভারত ও বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীসমূহ। সম্পূর্ণ মন্দিরে প্রায় ১৫ হাজারের মতো টেরাকোটা টালি রয়েছে।
কান্তজির মন্দিরটি ৩ টি ধাপে উপরের দিকে উঠে গেছে এবং মন্দিরের চারপাশের খিলান দিয়ে মন্দিরের ভেতরের বেদমূর্তি দেখা যায়। সম্পূর্ণ মন্দির প্রাঙ্গণটি দেখতে আয়তাকার মনে হলেও পাথরের ভিত্তির উপর দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি দেখতে বর্গাকার।
মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা দিয়ে উপরের দিকে সিঁড়ি উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় প্রবেশপথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। ২ টি ইটের স্তম্ভ দিয়ে খিলানগুলো আলাদা করা হয়েছে। মন্দিরের নিচতলায় ২১ টি, দ্বিতীয় তলায় ২৭ টি এবং তৃতীয় তলায় ৩ টি দরজা-খিলান রয়েছে।
প্রতিবছর শীতের শুরুতে মন্দির প্রাঙ্গণে ১ মাস ব্যাপী রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়দের মতে মহারাজা রামনাথ রায়ের সময়কাল এই মেলা শুরু হয়েছে এবং বর্তমানেও চলছে। মেলা চলাকালীন সময় অনেক তীর্থ যাত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মন্দিরে তীর্থ যাত্রা করেন।
কান্তজির মন্দিরের ইতিহাস
মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপির তথ্য মতে, দিনাজপুরের তৎকালীন মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় এই মন্দিরের কাজ শুরু করেন। ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর পর তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন।
মন্দির তৈরির শুরুতে এর চূড়ার উচ্চতা ছিলো ৭০ ফুট। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ভূমিকম্পে মন্দিরের চূড়াগুলো ভেঙে যায়। ২০ শতকের শুরুর দিকে মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরটির সংস্কার করলেও চূড়াগুলো সংস্কার করা হয়নি।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশে নতুন চালু হওয়া ২০ টাকার নোটে কান্তজির মন্দিরের ছবি প্রিন্ট করার পর থেকে দেশ জুড়ে এই মন্দিরের পরিচিত লাভ করেছে।
কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে চড়ে খুব সহজে দিনাজপুর যেতে পারবেন। ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুরগামী নাবিল পরিবহন, এস এ পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস, হানিফ পরিবহন, কেয়া পরিবহন, বাবলু এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি বাসে চড়ে দিনাজপুর যেতে পারবেন।
নন-এসি ও এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০০ থেকে ১,৫০০ টাকা। সারাদিন প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় ঢাকা থেকে দিনাজপুর বাস ছেড়ে যায়। এছাড়া ঢাকার উত্তরা থেকে কিছু পরিবহন দিনাজপুর যায়।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গলবার বাদে সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে এবং দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন প্রতি বুধবার বাদে সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া এসি বার্থ ৮৯৭ টাকা, এসি চেয়ার ৬১৮ টাকা, প্রথম শ্রেণি বার্থ ৫৩৫ টাকা, প্রথম শ্রেণি চেয়ার ৩৫০ টাকা, শোভন চেয়ার ২৫০ টাকা, শোভন সিট ১৮৫ টাকা।
দিনাজপুর শহর শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে সরাসরি কান্তজির মন্দির যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
দিনাজপুর শহরে খাবার জন্য ভালো মানের অনেক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে দিলশাদ রেস্তোরাঁ, রুস্তম হোটেল, ফাইভ স্টার হোটেল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পুলাহাট বিসিক এলাকায় অবস্থিত আবুল হোটেলে সাদা ভাত, গরু বা মুরগির মাংস, ডাল, মাছ, ডিম, সবজি, ভর্তা, সালাদ ইত্যাদি খেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য ভালো মানের অনেক হোটেল-মোটেল রয়েছে। দিনাজপুর অবস্থিত বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেলে অগ্রিম বুকিং (0531-64718, 9899288-91) দিয়ে থাকতে পারেন। পর্যটন মোটেলে প্রতি রাতের ভাড়া ১,৫০০ থেকে ২,২০০ টাকা।
এছাড়া দিনাজপুর শহর অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল ডায়মন্ড (0531-64629), হোটেল আল রশিদ (0531-64251), নিউ হোটেল (0531-68122), হোটেল নবীন (0531-64178), হোটেল রেহানা (0531-64414) উল্লেখযোগ্য। দিনাজপুর আবাসিক হোটেল ভাড়া জানুন
আপনি চাইলে রামসাগর বন বিভাগের বাংলোতে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারেন। এখানে এসি, নন-এসি সব ধরনের রুম রয়েছে। নন-এসি রুমের ভাড়া ৫০০ টাকা এবং এসি রুমের ভাড়া ১,০০০ টাকা।