খোয়াসাগর দীঘি, লক্ষীপুর

লক্ষীপুর জেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে দালাল বাজার এলাকার লক্ষীপুর-রায়পুর সড়কের পাশে অবস্থিত খোয়াসাগর দীঘি (Khoya Sagar Dighi)। প্রায় ২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃতি দীঘির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তাকালে কুয়াশাচ্ছন্ন দেখা যায়।  স্থানীয় মানুষরা কুয়াশাকে খেয়া বলে। তাছাড়া এই দীঘির পানি সাগরের পানির মতোই দেখায়। এই দুইয়ে মিলেই খোয়াসাগর দীঘি নামকরণ হয়।

স্থানীয় মানুষের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে দালাল বাজারের জমিদার ব্রজবল্লভ রায় প্রায় ২০০ বছর আগে ১৭৫৫ সালে দীঘিটি খনন করেন। পরবর্তী সময় জমিদার রাজা গৌড় কিশোর রায় দীঘির সংস্কার করেন।

বর্তমানে লক্ষীপুর জেলার খোয়াসাগর দীঘি জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। দীঘির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পাড়ে অসংখ্য গাছ লাগানো হয়েছে। উত্তর ও পশ্চিম পাড়ে ওয়ার্কওকে ও রেলিং নির্মাণ করা হয়েছে।  দর্শনার্থীদের বসার জন্য দীঘিমুখী করে খোলা আকাশের নিচে বানানো হয়েছে বেঞ্চ।

সোলার ল্যাম্পপোস্টের মাধ্যমে সন্ধ্যার পর আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দীঘিতে ঘোরার জন্য দৃষ্টিনন্দন ছোট ছোট নৌকা আছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে শিল্পাঙ্গণ। দীঘির দুই পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ৬-৭ টি চাইনিজ রেস্তোরাঁ।

BM Khalid Hasan Sujon

দর্শনার্থীদের পদচারণায় দীঘি এলাকা অঘোষিত পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। এখানে প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভিড়। বিশেষ করে শুক্র-শনিবার সহ ছুটির দিন গুলোতে বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নির্মল বাতাসের জন্য ছুটে আসে।

এই দীঘির সাথে জড়িয়ে আছে নানা ধরনের কল্পকাহিনী। কথিত আছে, কোন এক সময় বরযাত্রী নববধূকে নিয়ে দীঘির পাড় দিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় বরযাত্রীদের পানি পিপাসা পেলে তারা দীঘির পাড়ে পানি পান করার জন্য নামে। যখন নববধূ পানি পান করার জন্য দীঘিতে নামে তখন অদ্ভুত কিছু নববধূর পা ধরে টেনে গভীর পানির নিচে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা বিশ্বাস করে এই ঘটনার পর দীঘিতে এমন গভীর গর্ত হয়েছে যে গ্রীস্মের সময়ও পানি শুকায় না।

খোয়াসাগর দীঘির পশ্চিম পাশে একটু দূরে কোদাল ধোঁয়া দীঘী নামে আরেকটি দীঘি আছে। কথিত আছে, খোয়াসাগর দীঘি খনন করা শ্রমিকরা কোদাল ধুতে এসে এখানে প্রতিদিন এক কোপ করে মাটি কেটে কোদাল ধোয়া দীঘি খনন করে।

খোয়াসাগর দীঘি যাওয়ার উপায়

ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে আলম, ইকোনো, রয়েল, গ্রীনল্যান্ড এক্সপ্রেস, ঢাকা এক্সপ্রেস সহ লক্ষীপুরগামী যেকোনো বাসে চড়ে লক্ষীপুর আসতে পারবেন। ঢাকা টু লক্ষীপুর নন-এসি বাস ভাড়া ৭০০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ১,০০০ টাকা, যেতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা।

এছাড়া ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে লক্ষীপুরগামী যেকোনো লঞ্চে চড়ে লক্ষীপুর মজু চৌধুরী ঘাট যাবেন। সেখান থেকে বা লক্ষীপুর জেলা বাস টার্মিনাল থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে দালাল বাজার খোয়া সাগর দীঘি যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য লক্ষীপুর জেলা শহরে চলে আসুন। সেখানে সোনার বাংলা গেস্ট হাউজ (01733-687166), হোটেল আবেহায়াত (01718-428922), হোটেল গোলাপ (01860-188302), এন আর গেস্ট হাউজ (01623-619053), হোটেল ইউনিক, (01732-202256), স্টার গেস্ট হাউজে (01726-123719) থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

দীঘির দুই পাড়ে অবস্থিত চাইনিজ রেস্তোরাঁ, ফুসকা – চটপটি, ঝালমুড়ি, বাদাম সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পারবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

ভালো মানের খাবার জন্য লক্ষীপুর জেলা শহরে অবস্থিত রাজমহল হোটেল, মোহাম্মদীয়া হোটেল, নূর জাহান হোটেল, ফুড গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, কুটুম বাড়ি রেস্টুরেন্ট, আব্বাস আলী রেস্টুরেন্ট, তৃপ্তি হোটেল, সেন্ট মার্টিন রেস্টুরেন্ট থেকে পছন্দসই খাবার খেতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে আস সালাম জামে মসজিদ, তিতা খাঁ মসজিদ, দালাল বাজার জমিদার বাড়ি, জ্বীনের মসজিদ, মতিরহাট সৈকত, আলেকজান্ডার মেঘনা বীচ উল্লেখযোগ্য।