টাঙ্গাইলে যতগুলো ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় মহেরা জমিদার বাড়ি (Mohera Jamindar Bari)। টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে মির্জাপুরে প্রায় ৮ একর জায়গায় জুড়ে অবস্থিত মহেরা জমিদার বাড়ি।
জমিদার বাড়ির সাথে রয়েছে চিড়িয়াখানা, ছোট পার্ক, পিকনিক স্পট ও দিঘীতে বোট রাইডের ব্যবস্থা। জমিদার বাড়ির প্রবেশপথে রয়েছে বিশাল দুইটি সুরম্য গেইট। বিশাল ৩ টি প্রধান ভবনের সাথে নায়েব সাহেবের ঘর, কাছারি ঘর, গোমস্তাদের ঘর, ৩ টি লজ ও দিঘী রয়েছে। এছাড়া এখানে একটি ফোয়ারা আছে।
জমিদার বাড়ি প্রবেশের আগেই বিশাখা সাগর নামে একটি দিঘী এবং মূল ভবনের পিছনের দিকে রানী পুকুর ও পাসরা পুকুর নামে আরো দুইটি পুকুর রয়েছে। এছাড়া শোভাবর্ধনে সুন্দর ফুলের বাগান রয়েছে।
মহেরা জমিদার বাড়ির ইতিহাস
১৮৯০ দশকের পূর্বে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা জমিদার বাড়িতে হামলা হয় এবং জমিদার বাড়ির কূলবধূ সহ ৫ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে।
এর পরবর্তীতে জমিদাররা লৌহজং নৌপথ দিয়ে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এখানে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে জমিদার বাড়িটি পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৯০ সালে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়।
মহেরা জমিদার বাড়ির অন্যান্য ভবন গুলো
চৌধুরী লজঃ জমিদার বাড়ি প্রবেশের পরেই দেখতে পাবেন দোতলা বিশিষ্ট গোলাপি রঙের একটি ভবন চৌধুরী লজ। রোমান স্থাপত্য শৈলীতে এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। সুন্দর নকশাখচিত এই ভবনের ভেতর রয়েছে ঢেউ খেলানো ছাদ। চৌধুরী লজ ভবনের সামনে রয়েছে সবুজ মাঠ ও সুন্দর ফুলের বাগান।
মহারাজ লজঃ বাইজেনটাইন স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মহারাজ লজ ভবনের সামনে রয়েছে ৬ টি কলাম। গোলাপি মহারাজ লজের সামনে রয়েছে সিঁড়ির বাঁকানো রেলিং ও ঝুলন্ত বারান্দা ভবনের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে। ভবনের সামনে বাগান ও পিছনে একটি টেনিস কোর্ট রয়েছে। মহারাজ লজে মোট ১২ টি কক্ষ আছে। বর্তমানে এটি শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আনন্দ লজঃ জমিদার বাড়ির সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় ভবন আনন্দ লজ। ভবনের সামনে সাদা ও নীল রঙের ৮ টি কলাম রয়েছে। তিন তলা বিশিষ্ট ঝুলন্ত বারান্দা ভবনের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে। ভবনের সামনে বাঘ, হরিণ সহ বিভিন্ন পশু-পাখির ভাস্কর্যসহ চমৎকার একটি বাগান আছে।
কালীচরণ লজঃ জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির শেষের দিকে কালীচরণ লজ নির্মাণ করা হয়। এই ভবনটি ইংরেজি ইউ (U) অক্ষরের স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। অন্যোন্য স্থাপত্য শৈলীর জন্য বিকালে ভবনের ভেতর সুন্দর আলোর ঝলকানি দেয়।
মহেরা জমিদার বাড়িতে উপরে উল্লেখ করা ভবন গুলো ছাড়াও আরো অনেক ভবন রয়েছে। এর মধ্যে নায়েব ভবন, কাচারি ভবন ও রানী মহল উল্লেখযোগ্য।
সময়সূচি ও টিকেট মূল্য
সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ১০ টাকা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জমিদার বাড়ি খোলা থাকে।
মহেরা জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করতে জনপ্রতি টিকেট মূল্য ১০০ টাকা। শিশু পার্কের প্রবেশ টিকেট মূল্য ২০ টাকা, সুইমিংপুল টিকেট মূল্য ৩০০ টাকা এবং বোট রাইডিং করতে আলাদা টিকেট কাটতে হয়। এছাড়া গাড়ি পাকিং ফি ৫০ টাকা।
পিকনিক স্পট, বিয়ে-শাদি বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য যোগাযোগ করুন 01933-996699, 01320-216899 ফোন নাম্বারে।
কিভাবে যাব
মহেরা জমিদার বাড়ি যেতে হলে প্রথমে আপনাকে টাঙ্গাইল জেলার নাটিয়াপাড়া বাস টার্মিনাল আসতে হবে। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ঝটিকা, ধলেশ্বরী, বিনিময় ইত্যাদি বাসে চড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে নাটিয়াপাড়া বাস টার্মিনাল নেমে যাবেন।
নাটিয়াপাড়া বাস টার্মিনাল থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে মহেরাপাড়া পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আসতে হবে। বর্তমানে জমিদার বাড়িটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
যারা ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চান তারা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ৬:২০ মিনিটে “সুন্দরবন এক্সপ্রেস”, দুপুর ২:৪০ মিনিটে ” সিস্কসিটি এক্সপ্রেস” এবং সন্ধ্যা ৭ টায় “চিত্রা এক্সপ্রেস” ট্রেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশন যাত্রাবিরতি করে।
উক্ত ট্রেনে চড়ে মির্জাপুর রেলওয়ে স্টেশন নেমে বাসে চড়ে ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে ডুবাইল পুলিশ লাইন রোডে যেতে হবে। এছাড়া সিএনজি বা অটোরিকশা করে পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র / জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
জমিদার বাড়ির মেইন গেইটের সামনে “হ্যালো” নামে দোতলা বিশিষ্ট একটি ক্যান্টিন আছে। এছাড়া পাশরা পুকুর ও ঝর্ণার সাথে ২ টি ছোট ক্যান্টিন রয়েছে। এখান থেকে পছন্দের খাবার আগেই অর্ডার দিতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
জমিদার বাড়িতে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে প্রতিরাত থাকার জন্য খরচ করতে হবে ৩,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা। এছাড়া টাঙ্গাইল জেলা শহরে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে।