নয়াবাদ মসজিদ, দিনাজপুর

নয়াবাদ মসজিদ (Nayabad Mosque) বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত। দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নয়াবাদ গ্রামে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আমলের রাজত্ব কালে প্রায় ১.১৫ বিঘা জায়গায় উপর এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।

মসজিদটির পাশ দিয়ে বহে গেছে ঢেপা নদী। মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের চার কোনে ৪ টি অষ্টভুজ মিনার রয়েছে। মসজিদের চারপাশের দেয়াল গুলো ১.১০ মিটার পুরুত্ব। উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে রয়েছে ১ টি করে জানালা।

মসজিদের তিনটি প্রবেশ দরজা বরাবর পশ্চিম পাশের দেয়ালে তিনটি মিম্বার রয়েছে। মাঝখানের মিম্বারটি আকারে বড় (২৩০ মিটার উচ্চতা এবং ১.০৮ মিটার প্রস্থ্য) এবং দুপাশের দুটি মিম্বার একই আকারের।

মসজিদ তৈরির সময় যে টেরাকেটা বা পোড়ামাটির কারুকার্য ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলোর অধিকাংশ এখন নেই। বর্তমানে মোট ১০৪ টি টেরাকোটা অবশিষ্ট রয়েছে, যার আয়তক্ষেত্রাকার ০.৪০ মিটার x ০.৩০ মিটার। মসজিদের পাশে একটি করব রয়েছে। তবে কবরটি কার সেটার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কথিত আছে কবরটি নির্মাণ শ্রমিকের।

BM Khalid Hasan Sujon

নয়াবাদ মসজিদের ইতিহাস

নয়াবাদ মসজিদের স্থাপিত ফলক থেকে জানা যায় সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আমলের রাজত্ব কালে ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। সেসময় দিনাজপুর রাজ পরিবারের সর্বশেষ বংশধর ছিলেন রাজা বৈদ্যনাথ।

এলাকার আধিবাসীদের তথ্য মতে ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময় কান্তজির মন্দির তৈরির কাজে পশ্চিমের কোন দেশ থেকে আগত মুসলমান স্থপতি ও কর্মীরা তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য এই মসজিদ তৈরি করেন।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে চড়ে খুব সহজে দিনাজপুর যেতে পারবেন। ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুরগামী নাবিল পরিবহন, এস এ পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস, হানিফ পরিবহন, কেয়া পরিবহন, বাবলু এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি বাসে চড়ে দিনাজপুর যেতে পারবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

নন-এসি ও এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০০ থেকে ১,৫০০ টাকা। সারাদিন প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় ঢাকা থেকে দিনাজপুর বাস ছেড়ে যায়। এছাড়া ঢাকার উত্তরা থেকে কিছু পরিবহন দিনাজপুর যায়।

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গলবার বাদে সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে এবং দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন প্রতি বুধবার বাদে সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া এসি বার্থ ৮৯৭ টাকা, এসি চেয়ার ৬১৮ টাকা, প্রথম শ্রেণি বার্থ ৫৩৫ টাকা, প্রথম শ্রেণি চেয়ার ৩৫০ টাকা, শোভন চেয়ার ২৫০ টাকা, শোভন সিট ১৮৫ টাকা।

দিনাজপুর শহর শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে সরাসরি নয়াবাদ মসজিদ যেতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

দিনাজপুর শহরে খাবার জন্য ভালো মানের অনেক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে দিলশাদ রেস্তোরাঁ, রুস্তম হোটেল, ফাইভ স্টার হোটেল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পুলাহাট বিসিক এলাকায় অবস্থিত আবুল হোটেলে সাদা ভাত, গরু বা মুরগির মাংস, ডাল, মাছ, ডিম, সবজি, ভর্তা, সালাদ ইত্যাদি খেতে পারেন।

BM Khalid Hasan Sujon

কোথায় থাকবেন

মসজিদের পাশে কান্তনগর এলাকায় সরকারি একটি রেস্ট হাউজ ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেলের একটি শাখা আছে। দিনাজপুর অবস্থিত বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেলে অগ্রিম বুকিং (0531-64718, 9899288-91) দিয়ে থাকতে পারেন। পর্যটন মোটেলে প্রতি রাতের ভাড়া ১,৫০০ থেকে ২,২০০ টাকা।

এছাড়া দিনাজপুর শহর অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল ডায়মন্ড (0531-64629), হোটেল আল রশিদ (0531-64251), নিউ হোটেল (0531-68122), হোটেল নবীন (0531-64178), হোটেল রেহানা (0531-64414) উল্লেখযোগ্য।

আপনি চাইলে রামসাগর বন বিভাগের বাংলোতে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারেন। এখানে এসি, নন-এসি সব ধরনের রুম রয়েছে। নন-এসি রুমের ভাড়া ৫০০ টাকা এবং এসি রুমের ভাড়া ১,০০০ টাকা।

আরো পড়ুন