মারায়ন তং, বান্দরবান

মারায়ন তং (Marayong tong) বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার আলীকদম থানার মিরিঞ্জা রেঞ্জে অবস্থিত একটি পাহাড় ও পর্যটন স্থান। এই পাহাড়টির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬৪০-১৬৬০ ফুট, যেখানে একটি বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।

এই পাহাড় আরো কয়েকটি নামে পরিচিত যেমন: মারায়ং তং, মারাইং ডং, মারায়ান তং, মেরাই থং জাদি ইত্যাদি। পাহাড়ের চূড়ার অংশটি সমতল। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যত দূর চোখ যাবে শুধু পাহাড়ের সারি। মনে হবে আপনি পাহাড়ের সমুদ্র দেখছেন।

পাহাড়ের নিচ দিয়ে বহে গেছে সাপের মতো এঁকেবেঁকে মাতামুহুরি নদী ও ফসলের ক্ষেত। সব মিলিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আপনি প্রাকৃতির এক অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে ত্রিপুরা, মুরং, মারমা সহ বেশকিছু আদিবাসীদের বসবাস। তারা মাচাংয়ের উপর ঘর বানায়, উপরে পরিবারের সদস্যরা থাকে এবং নিচে তাদের গবাদিপশু থাকে। এই আদিবাসী গোষ্ঠীরা জীবিকা নির্বাহ করে পাহাড়ের উপর। পাহাড়ে তারা তামাক, ফলমূল, শস্য ইত্যাদি চাষাবাদ করে। 

BM Khalid Hasan Sujon

যারা ক্যাম্পিং করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য মারাইং তং ক্যাম্পিং করার আদর্শ স্থান। মূলত এই পাহাড়টি ক্যাম্পিং করার জন্য পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় স্থান হিসাবে পরিচিত লাভ করেছে।

পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে গিয়ে মোট ৫ টি ট্রেইল রয়েছে। সবচেয়ে খাড়া ট্রেইলটি ভূমি থেকে ৭২ ডিগ্রি কোণে পাহাড়ের চূড়ার দিকে উঠে গেছে। পাহাড়টির সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে গেলে ৫ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ অতিক্রম করতে হবে।

মারায়ন তং পাহাড় কিভাবে যাবেন

ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি আলীকদমগামী বাস চলাচল করে। এসি নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ১,৭০০ টাকা পর্যন্ত। আলীকদম বাস স্টেশনে পৌছানোর আগে আবাসিক নামক জায়গায় নেমে যাবেন। বাসের সুপারভাইজারকে আগেই বলে রাখবেন আবাসিক স্থানে নামিয়ে দিবে।

BM Khalid Hasan Sujon

আবাসিক স্থান থেকে কাউকে জিজ্ঞেস করলে মারায়ন তং পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিবে। সেখান থেকে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে ২ ঘন্টার মতো সময় লাগবে। কারও কারও আরো বেশি সময় লাগতে পারে।

আবার ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী যেকোনো বাসে করে কক্সবাজারের চকোরিয়া নেমে যাবেন। এসি নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ১,৮০০ টাকা পর্যন্ত। যেতে সময় লাগবে ৮-৯ ঘন্টার মতো। পথে কুমিল্লার রেস্টুরেন্টে যাত্রাবিরতি দিবে খাবার জন্য।

সেখান থেকে লোকাল বাস বা জীপে করে আলীকদম যেতে পারবেন। লোকাল বাসে জনপ্রতি ভাড়া ৮০ টাকা। জীপ গাড়ি রিজার্ভ ভাড়া করে আলীকদম যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ১,১০০-১,২০০ টাকা। একটি জীপে ১০-১২ জন যেতে পারবেন।

বাস বা জীপে চকোরিয়া থেকে আলীকদম যাওয়ার আগে আবাসিক নামক স্থানে নেমে যাবেন। জনপ্রতি ভাড়া ৮০ টাকা। সেখানে কারও কাছে জিজ্ঞেস মারায়ন তং পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিবে।

BM Khalid Hasan Sujon

কোথায় থাকবেন

মারায়ন তং পাহাড়ে অধিকাংশ পর্যটকেরা ভ্রমণ করে ক্যাম্পিং করার জন্য। এজন্য তারা সাথে করে ক্যাম্পিং করার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাথে ক্যারিং করে।

যারা পাহাড়ের চূড়ায় ক্যাম্পিং করতে চান না তারা থাকার জন্য জেলা পরিষদ ডাকবাংলো ও দ্যা দামতুয়া ইন হোটেলে থাকতে পারবেন। জেলা পরিষদ ডাক বাংলোতে থাকার জন্য অবশ্যই আপনাকে অনুমতি নিতে হবে।

এছাড়া পান বাজারে থাকার জন্য সাধারণ মানের একটি বোর্ডিং রয়েছে। চাইলে সেখানেও থাকতে পারবেন।

মারাইংতং পাহাড় ভ্রমণের পরামর্শ

  • পাহাড়ে যাওয়ার আগে সাথে করে খাবার পানি, শুখনো খাবার, স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ঔষধ নিবেন।
  • ক্যাম্পিং করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাথে রাখুন।
  • রাতে পাহাড়ে ক্যাম্পিং করার জন্য স্থানীয় প্রশাসানের অনুমতি নিবেন।
  • পাহাড়ে উঠার সময় সাবধানে উঠবেন।
  • আদিবাসীদের অনুমতি ছাড়া কারও ছবি তুলবেন না।
  • আদিবাসীদের সাথে ভালো আচরণ করুন।
  • পাহাড়ে ময়লা (বিস্কুট, চিপসের প্যাকেট) ফেলবেন না।
  • প্রয়োজনে স্থানীয় কাউকে গাইড হিসাবে নিতে পারেন।
  • আদিবাসী পাড়ার প্রধানের মোবাইল নাম্বার নিবেন, প্রয়োজনে ফোন দিবেন।
  • পাহাড়ের চূড়ায় শ্বাসকষ্ট হলে নেমে আসুন।

আরো পড়ুন