বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দির (Sonabaria mothbari mandir) একটি ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। স্থানীয়দের কাছে এই মন্দিরটি শ্যাম সুন্দর মন্দির নামেও পরিচিত। এর সাথে লাগানো রয়েছে দুর্গামন্দির ও শিবমন্দির।
মঠবাড়ি মন্দিরের দোয়ালের শিলালিপিতে শ্যাম সুন্দর নবরত্ন মন্দির নামের উল্লেখ পাওয়া গেছে। এই মন্দিরগুচ্ছের দক্ষিণ দিকে অসম বাহুবিশিষ্ট একটি চৌকো দীঘি আছে। বর্তমানে এই ঐতিহাসিক দীঘিটি বিষমবাহুর আকার ধারণ করেছে।
সোনাবাড়িয়া গ্রামে মঠবাড়ি মন্দির ছাড়াও মধ্যযুগীয় বিভিন্ন পুরাকীর্তি বা নিদর্শন আছে। শ্যাম সুন্দর মন্দিরটি প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো এবং ৬০ ফুট উঁচু। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে জনৈক হরিরাম দাস মতান্তরে দুর্গাপ্রিয় দাস সোনাবাড়িয়া গ্রামে এই মঠবাড়ি মন্দির নির্মাণ করেন।
বিশালাকৃতির এই মঠবাড়ি মন্দিরটি ছোট ছোট পাতলা ইট ও টেরাকোটা ফলক দিয়ে তৈরি করা হয়। যার সব জায়গায় আকর্ষণীয় কারুকাজ। প্রায় ১৫ একর জায়গায় উপর অবস্থিত এই মন্দিরটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট চওড়া। মন্দিরের চারপাশে আম, কাঁঠাল, নারিকেল, দেবদারু, মেহগনি ও সেগুন গাছের বাগান দিয়ে ঘেরা।
বিশাল পিরামিড আকৃতির এই মন্দিরের নিচের তলার অংশ চার ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে চারপাশে ঘূর্ণায়মান টানা অলিন্দ, দ্বিতীয় অংশে মন্ডপ, তৃতীয় অংশে কোঠা ও প্রকোষ্ঠ দেখা যায়। পূর্বদিকের একটি অলিন্দ থেকে উপরে উঠার সিঁড়ি রয়েছে।
মঠবাড়ি মন্দিরের ছাদের ওপর ক্রমান্বয়ে ঊর্ধমুখি গম্বুজোর মাঝখানে বড় একটি রত্ন রয়েছে। যেকারণে এই মন্দিরটি নবরত্ন মন্দির হিসেবে পরিচিত।
কথিত আছে, কোনো এক সময় “রামকৃষ্ণ পরমহংস” মঠবাড়ি মন্দিরে প্রায় ২ মাস অবস্থান করেন। এজন্য হিন্দু ধর্মাম্বলীদের কাছে এই সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দিরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই মন্দির দেখতে অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে।
সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দির যাওয়ার উপায়
রাজধানী ঢাকার গাবতলী, নবীনগর, সাভার ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনাল থেকে সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস, হানিফ, সোহাগ, শ্যামলী, এম আর, ঈগল, সাতক্ষীরা লাইন, টুঙ্গিপাড়া, ইমাদ, গ্রীন লাইন, কে লাইন, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, মামুন, এ. কে. ট্রাভেল, সৌদিয়া পরিবহনে করে সাতক্ষীরা শহরের আগে কলারোয়া বাজারে নেমে যাবেন। বাসের সুপারভাইজারকে আগেই বলে রাখবেন আপনাকে কলারোয়া বাজারে নামিয়ে দিবে। এসি/নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০০ থেকে ১,৫০০ টাকা।
কলারোয়া বাজার থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সোনাবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত মঠবাড়ি মন্দির। কলারোয়া বাজার থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি ভাড়া করে মঠবাড়ি মন্দির দেখে আসতে পারেন। সিএনজিতে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৪০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট।
কোথায় থাকবেন
সাতক্ষীরা শহরে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল আল-কাশেম আবাসিক, হোটেল টাইগার প্লাস, হোটেল সাতক্ষীরা প্যালেস, হোটেল উত্তরা, হোটেল সংগ্রাম, হোটেল সম্রাট, হোটেল বৈশাখী, হোটেল সীমান্ত উল্লেখযোগ্য। সাতক্ষীরা আবাসিক হোটেল সমূহের তথ্য জানুন।
কোথায় খাবেন
সাতক্ষীরা শহরে খাবার জন্য অনেক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল সোনারগাঁও, লেক ভিউ ক্যাফে, পানসি রেস্তোরাঁ, স্বপ্ন রেস্তোরাঁ, আব্বাস হোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সাতক্ষীরার বিখ্যাত সন্দেশ, বাগদা চিংড়ি, সুন্দরবনের খাঁটি মধু অবশ্যই খাবেন।
সাতক্ষীরা দর্শনীয় স্থান সমূহ
সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দির ছাড়াও আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে এর মধ্যে কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক, মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, মোজাফফর গার্ডেন, বনবিবির বটগাছ, লেক ভিউ ক্যাফে, নলতা শরীফ, রুপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র উল্লেখ্যযোগ্য।