রামু বৌদ্ধ মন্দির ভ্রমণ সম্পূর্ণ গাইডলাইন
রামু বৌদ্ধ মন্দির (Ramu buddha mandir) গুলো কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় অবস্থিত। রামু উপজেলায় রয়েছে বৌদ্ধদের অনেক প্রচীন বৌদ্ধ মন্দির বা নিদর্শন।
বর্তমানে রামুতে মোট ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির ও জাদি আছে। রামুর উত্তর মিঠাছড়ি পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা মূর্তি। যা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় গৌতম বুদ্ধের মূর্তি।
রামু বৌদ্ধ মন্দির থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে নতুন করে নির্মিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় সীমাবিহার। এর কিছুটা দক্ষিণে গেলে দেখতে পাবেন লালচিং ও সাদাচিং বৌদ্ধ বিহার, যা আপনার নজর কাড়বে। এছাড়া রামু উপজেলার আশেপাশে দেখতে ছোট বড় অসংখ্য বৌদ্ধ মন্দির।
রামুর এই সব বৌদ্ধ মন্দির গুলো প্রচীনকাল থেকে অনেক গৌরবময় সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। কক্সবাজার পর্যটন নগরী হওয়ায় রামু বৌদ্ধ মন্দির ও প্রত্নতাতিত্বক নিদর্শন পরিদর্শনের জন্য সারা বছর দেশ বিদেশের পর্যটকেরা এখানে ঘুরতে আসে।
কিভাবে রামু বৌদ্ধ মন্দির যাবেন
রামু বৌদ্ধ মন্দির আসতে হলে প্রথমে আপনাকে কক্সবাজার আসতে হবে। কারণ কক্সবাজার জেলার অন্তগত রামু উপজেলা। ঢাকা থেকে বাসে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, আব্দুল্লাহপুর বাস টার্মিনাল থেকে শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ, মর্ডান লাইন, ঈগল, এস আলম, গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, কক্সবাজার পরিবহন সহ আরো বিভিন্ন কোম্পানির বাসে কক্সবাজার যেতে পারবেন।
এসি, নন-এসি বাস ভেদে ঢাকা টু কক্সবাজার ভাড়া ১,০০০ টাকা থেকে ২,৬০০ টাকা পর্যন্ত। যেতে সময় লাগবে ৮ থেকে ৯ ঘন্টার মতো। ঢাকা থেকে রাত ১০ টায় বাস ছাড়লে সকাল ৭ টার মধ্যে কক্সবাজার পৌঁছে যাবেন।
ট্রেনে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে কমলাপুর রেলস্টেশন বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস বা পর্যটন এক্সপ্রেস ট্রেনে কক্সবাজার যেতে পারবেন। ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেন ভাড়া ৫০০ টাকা ১,৭৫০ টাকা পর্যন্ত।
ভ্রমণ বাজেট বেশি হলে বিমানে ঢাকা টু কক্সবাজার যেতে পারবেন। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান থেকে নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইটে সরকারি কক্সবাজার যেতে পারবেন। সিট-ক্লাস ভেদে ভাড়া ৩,৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত।
কক্সবাজার থেকে রামু ঘুরতে যাওয়ার সহজ উপায় হল রিজার্ভ সিএনজি বা অটোরিকশা ভাড়া নেওয়া। তাহলে রামুর জনপ্রিয় স্থান গুলো সহজে ও অল্প সময়ের মধ্যে দেখে আসতে পারবেন।
ইজিবাইক বা অটোরিকশা করে রামু গিয়ে অল্প সময়ের (৪-৫ ঘন্টা) মধ্যে অনেক গুলো বৌদ্ধ মন্দির ঘুরে দেখতে পারবেন। কক্সবাজার থেকে রামু যেতে সিএনজি বা অটোরিকশা ভাড়া নেয় জনপ্রতি ৪০ টাকা। আর রিজার্ভ করে গেলে ৪০০-৫০০ টাকা লাগবে। সিএনজি বা অটোরিকশায় সহজে ৬-৭ জন যেতে পারবেন।
রামু উপজেলার দর্শনীয় স্থান
রামু উপজেলায় দেখার মতো অনেক বৌদ্ধ মন্দির ও বিহার রয়েছে। রামু উপজেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উত্তর মিঠাছড়ি ১০০ ফুট বৌদ্ধ মূর্তি, শ্রী শ্রী রামকুট তীর্থ ধাম, রাংকূট বৌদ্ধ বিহার, লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার, রামু সীমা বিহার, লাল চিং/সাদা চিং, রামু জাদী পাহাড়, রামু রাবার বাগান ও নারিকেল বাগান উল্লেখযোগ্য।
কোথায় থাকবেন
কক্সবাজার পর্যটন নগরী হওয়ায় এখানে পর্যটকদের থাকার জন্য বিভিন্ন মানের ৫০০ টির বেশি হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলা অবস্থিত, তাই অধিকাংশ পর্যটকেরা কক্সবাজার থাকা সুবিধা মনে করে।
কক্সবাজারে থাকার জন্য ৫০০ টাকা থেকে ৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট আছে। আপনার বাজেট অনুযায়ী কেমন হোটেলে থাকতে চান সেটা আপনার উপর নির্ভর করবে। বাজেট অনুযায়ী কক্সবাজার হোটেল/মোটেল/রিসোর্ট গুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা: হানিমুন রিসোর্ট, কল্লোল, ইকরা বিচ রিসোর্ট, উর্মি গেস্ট হাউজ, নীলিমা রিসোর্ট, মিডিয়া ইন, কোরাল রীফ, অভিসর ইত্যাদি।
৩,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা: আইল্যান্ডিয়া, ইউনি রিসোর্ট, সী ক্রাউন, বীচ ভিউ, নিটোল রিসোর্ট, সী প্যালেস, সী গাল ইত্যাদি।
৬,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা: কক্স টুডে, সায়মন বিচ রিসোর্ট, লং বিচ, হেরিটেজ, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ ইত্যাদি।
উপরে উল্লেখ করা হোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে সিজনের সময় এবং অফ সিজনের সময় ভাড়া কিছুটা কম বেশি হয়ে থাকে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে হোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে অগ্রিম রুম বুকিং করে আসা ভালো। কারণ এই সময় রুম পাওয়া কষ্টকর।
কম টাকায় হোটেল খুঁজতে বিচ থেকে এবং মেইন রোড থেকে যত দূরে হোটেল ভাড়া নিবেন তত কম টাকায় হোটেল পাবেন। হোটেল ও রিসোর্ট খোঁজার জন্য রিকশাওয়াদের পরামর্শ না নেওয়া ভালো। প্রয়োজনে হোটেলের ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
কোথায় খাবেন এবং কি কি খাবেন
কক্সবাজার থেকে রামু বৌদ্ধ মন্দির ঘুরে আসতে মাত্র ৪-৫ ঘন্টা সময় লাগে। তাই অধিকাংশ পর্যটকেরা কক্সবাজার থেকে খাওয়া-দাওয়া করে। আপনি চাইলে সাথে করে কিছু শুননো খাবার নিয়ে যেতে পারেন অথবা কক্সবাজার ফিরে এসে খেতে পারেন।
কক্সবাজার মিডিয়াম বাজেটের মধ্যে খাওয়ার জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি রেস্তোরাঁ হল ঝাউবন, নিরিবিলি, পৌষি, রোদেলা, ধানসিঁড়ি উল্লেখযোগ্য। সিজনের সময় অন্য সব কিছুর মতো এখানে খাবারের দাম একটু বেশি থাকে।
ভাত: ৩০-৪০ টাকা, ডাল: ৩০-৪০ টাকা, সামুদ্রিক মাছের ভর্তা (৮-১০ রকমের আয়টেম): ৭৫/১৫০/৩০০ টাকা, কোরাল/ভেটকি মাছ (প্রতিপিচ): ১৫০ টাকা, গরুর মাংস: ১৫০-২০০ টাকা, খাশির মাংস: ২০০-৩০০ টাকা, দেশি মুরগির মাংস: ১৫০-২০০ টাকা, রুপচাঁদা মাছ: ৩০০-৪০০ টাকা
যারা উন্নত মানের খাবার খেতে চান তাদের জন্য কেওএফসি তো আছেই। কম টাকায় হায়দ্রাবাদী বিরানি খেতে চাইলে লাবনী পয়েন্টের পাশে হান্ডি রেস্তোরাঁ থেকে খেতে পারবেন। ২০০-২৫০ টাকার মধ্যে বিরানি খেতে পারবেন।