নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও ট্রেইল – যাওয়ার উপায়, খরচ ও সতর্কতা
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা (Napittachhara Waterfall) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের নয়াদুয়ার এলাকায় অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। বর্তমানে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় একটি নাম নাপিত্তাছড়া ট্রেইল ও ঝর্ণা।
এখানে মিঠাছড়ি, কুপিকাটাকুম ও বান্দারকুম বা বান্দরিছড়া নামে তিনটি ঝর্ণা ও খুম রয়েছে। এই ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য যে ঝিরিপথ রয়েছে সেটাকে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল বলে। এই ঝিরিপথের ট্রেইল তুলনামূলক সহজ, তাই একটু কষ্ট করে একদিনের ৫-৬ ঘন্টা ট্রেইলে সবগুলো ঝর্ণা ও খুম উপভোগ করতে পারবেন।
মীরসরাই রেঞ্জে যতগুলো ঝর্ণা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো নাপিত্তাছড়া ও খৈয়াছড়া ঝর্ণা। যারা এই ঝর্ণা দেখতে আসবেন তারা হাতে কমপক্ষে ২-৩ দিন সময় নিয়ে আশেপাশে অবস্থিত ট্রেইল, ঝর্ণা ও পাহাড় গুলো দেখে যাবেন।
যাওয়ার উপযুক্ত সময়
বছরের যেকোনো সময় এই ঝর্ণায় ঘুরতে যেতে পারেন। তবে ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। কারণ এ সময় ঝর্ণায় প্রচুর পানি থাকে। তবে বর্ষাকালে ঝর্ণায় কিছু বিপদের সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই ঘুরতে গিয়ে সাবধান থাকা ভালো।
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে বাসে: ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী সৌদিয়া, এস আলম, হানিফ, ঈগল, এনা, সোহাগ, গ্রীনলাইন, শ্যামলী, ইউনিক সহ যেকোনো পরিবহনে করে চট্টগ্রাম মীরসরাই এর নয়দুয়ারি বাজারে নেমে যাবেন। বাসের সুপারভাইজারকে আগেই বলে রাখবেন আপনাকে নয়দুয়ারি বাজারে নামিয়ে দিবে। এসি, নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০০ থেকে ১,২০০ টাকা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে: ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো আন্তঃনগর এক্সপ্রেসে চড়ে ফেনী রেলস্টেশন নেমে যাবেন। সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ২৬৫ থেকে ৯০৯ টাকা। ফেনী রেলস্টেশন থেকে ২৫ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে মহিপাল বাস স্টেশন যাবেন। সেখান থেকে লোকাল বাস বা লেগুনা করে মীরসরাই এর নয়দুয়ারি বাজারে যাবেন।
চট্টগ্রাম থেকে বাসে: চট্টগ্রাম অলংকার সিটি গেইট থেকে লোকাল বাসে চড়ে মীরসরাই এর নয়দুয়ারি বাজারে আসবেন। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ১২০ টাকা।
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও ট্রেইল ভ্রমণ গাইডলাইন
মীরসরাই এর নয়দুয়ারি বাজারের পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করলে রেললাইন দেখতে পাবেন। রেললাইন পার হয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে নাপিত্তা ছড়া দেখতে পাবেন। এখান থেকে ঝিরি ও পাহাড় পথের ট্রেকিং শুরু হবে।
ঝিরিপথ ধরে কিছু দুর এগিয়ে গেলে ট্রেইলের প্রথম টিপরা খুমের দেখা পাবেন। মূলত এটি একটি ক্যাসকেড। টিপরা খুমের উপরেই কুপিকাটা খুম। এই কুপিকাটা খুমের গভীরতা অনেক বেশি।
কুটিকাটা খুমের ডান পাশ দিয়ে পাহাড়ে উঠার পর আবার ঝিরিতে নেমে আসলে হাতের বাম পাশে আরো একটি ঝিরি দেখতে পাবেন। এই ঝিরি ধরে প্রায় আধাঘন্টা পথ হাঁটার পর ঝিরির শেষ মাথায় বাঘ বিয়ানী ঝর্ণা দেখতে পাবেন।
বাঘ বিয়ানী ঝর্ণা দেখে আবার পিছনে এসে আগের ঝিরি দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলে কয়েকটি সুন্দর ক্যাসকেড দেখতে পাবেন। এই ঝিরির শেষ মাথায় দেখতে পাবেন ট্রেইলের সবচেয়ে সুন্দর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা।
পথে আপনার মতো অনেক পর্যটকদের দেখতে পাবেন। তাই পথ হারানোর ভয় নেই। পথ চিনতে সমস্যা হলে স্থানীয় মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করলে পথ দেখিয়ে দিবে। চাইলে নয়দুয়ারী বাজার থেকে ট্রেইল ঘুরে দেখার জন্য স্থানীয় কাউকে গাইড হিসাবে নিতে পারেন।
কোথায় খাবেন
নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে যাবার পথে ছোট একটা খাবার হোটেল রয়েছে। সেখানে পর্যটকেরা ট্রেইলে যাওয়ার সময় মেন্যু অনুযায়ী খাবার অর্ডার দেয় এবং ফিরে এসে খাওয়া-দাওয়া করে। এই হোটেল থেকে কম খরচে খাবার খেতে পারবেন।
মীরসরাই নয়দুয়ারী বাজারে খাবার জন্য তেমন ভালো কোনো খাবার হোটেল নেই। সীতাকুণ্ড বাজারে খাবার জন্য মোটামুটি মানের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সৌদিয়া রেস্তোরাঁ, আল-আমিন রেস্তোরাঁ ও আপন রেস্তোরাঁ। এখান থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
একদিনের নাপিত্তাছড়া ট্রেইল ভ্রমণ করতে ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগে। তাই পর্যটকদের এখানে থাকার প্রয়োজন হয় না। যারা আশেপাশের দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে দেখতে চান তারা সীতাকুণ্ড বাজার চলে আসবেন।
সীতাকুণ্ড বাজারে থাকার জন্য মোটামুটি মানের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোটেল সৌদিয়া, রুম ভাড়া ৭০০ থেকে ১,২০০ টাকা। মোবাইল নাম্বার 01991-787979, 01816-518119। হোটেল সাইমুন, রুম ভাড়া ৪০০ থেকে ৭০০০ টাকা। মোবাইল নাম্বার 01827-334082, 01825-128767.
এছাড়া সীতাকুণ্ডে সরকারি ডাকবাংলো রয়েছে। অনুমতি নিয়ে স্পল্প খরচে সেখানে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
সতর্কতা
- হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে ট্রেইলে যাওয়া ভালো।
- বর্ষা মৌসুমে ঝিরিতে প্রচুর পানি থাকে তাই সাবধানে হাঁটবেন।
- পাথরের ঝিরিপথ অনেক পিচ্ছিল হয়, তাই সাবধানে চলাচল করবেন।
- ট্রেইলে যাওয়ার সময় ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে ট্রেকিং করবেন।
- পানির বোতল, বিস্কিটের প্যাকেট ইত্যাদি যেখানে-সেখানে ফেলবেন না।
- ছোট বাচ্চা ও বয়স্কদের নিয়ে ট্রেইলে যাবেন না।
- প্রয়োজনীয় ঔষুধ সাথে নেওয়া ভালো।
- স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান সমূহ
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও ট্রেইল ছাড়াও আশেপাশে অনেক সুন্দর সুন্দর ঝর্ণা ও ট্রেইল রয়েছে। তাই হাতে কয়েকদিন সময় নিয়ে ঘুরে দেখে আসতে পারেন। আশেপাশে দর্শনীয় ঝর্ণা গুলোর মধ্যে রুপসী ঝর্ণা, সোনাইছড়ি ট্রেইল, খৈয়াছড়া ঝর্ণা, কমলদহ ঝর্ণা উল্লেখযোগ্য।