বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফ (Biswa Zaker Manzil Pak Darbar Sharif) ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার আটরশি গ্রামে অবস্থিত। অনেকের কাছে এই দরবার শরিফ আটরশি দরবার শরিফ নামে পরিচিত। যার প্রতিষ্ঠাতা শাহসুফী খাজা হাশমত উল্লাহ (রহঃ)। তিনি বিশ্ব ওলি খাজাবাবা ফরিদপুরী নামে বেশি সংখ্যাক ভক্তদের কাছে পরিচিত।
খাজা হাশমত উল্লাহ ফরিদপুরী (রহঃ) জামালপুর জেলার শেরপুর থাকার পাকুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খাজা এনায়েতপুরী (শাহসুফী মুহাম্মদ ইউনুস আলী এনায়েতপুরী রহঃ) এর মুরিদ ও খলীফা।
মাত্র ১০ বছর বয়সে খাজা হাশমত উল্লাহ ফরিদপুরী (রহঃ) এর পিতা তাকে খাজা এনায়েতপুরীর হাতে অর্পণ করেন। ত্রিশ বছর খাজা এনায়েতপুরীর কাছ থেকে সাধনা লাভ করে তার নির্দেশে তিনি ফরিদপুর এসে “জাকের ক্যাম্প” প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এটার নাম দেওয়া হয় “বিশ্ব জাকের মঞ্জিল”।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ, কামিল মাদ্রাসা, ব্যাংক, পোষ্ট অফিস ও তিনটি হ্যালিপ্যাড।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের ইতিহাস
১৯৪৫ সালে ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার আটরশি গ্রামে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল প্রতিষ্ঠিত করেন শাহসুফী খাজা হাশমত উল্লাহ (রহঃ)। এই প্রতিষ্ঠানটি মানুষের মধ্যে ইসলামের শান্তি ও প্রমের বার্তা প্রচার করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্দেশ্য মুসলমানদের আধ্যাত্নিক শিক্ষা প্রদান ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করা।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফ উরস কবে
বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফে প্রতি বছর ২৬, ২৭, ২৮ ফেব্রুয়ারী যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উরস শরীর অনুষ্ঠিত হয়। মহাপবিত্র উরস শরীফ অনুষ্ঠানে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে বিশাল কর্মযঞ্জের আয়োজন করা হয়।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখ লাখ ভক্তরা উরস শরীফে হাজির হয়। উরস শরীফের সমস্ত খরচ আসে ভক্তদের দানের টাকায়। উরস শরীফ সম্পূর্ণ করার জন্য প্রায় ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করে। এখানে প্রতিবারে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের খাবার একবারে রান্না করা হয় এবং বিনামূল্যে ভক্তদের খাবার পরিবেশন করা হয়।।
উরসের সময় ভক্তদের জন্য প্রতিদিন ১৮ ঘন্টা একটানা খাবার রান্না করা হয়। রান্নার জন্য প্রায় ২০০ চুলা আছে। উরস শরীফ উপলক্ষে ভক্তরা চাল, ডাল, মসলা, তেল, গরু, ছাগল, টাকা-পয়সা দান করে থাকেন। কথায় আছে – আটরশি দরবার শরিফে যত পরিমান গরু আসে এতো পরিমান গরু নাকি আর কোথায় একত্রে দেখা যায় না। ভক্তদের মতে এখানের তাবারক খেলে রোগ মুক্তি হয়।
কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান থেকে ফরিদপুর সদরপুর সরাসরি বাস চলাচল করে। গুলিস্তান থেকে যমুনা পরিবহন, জিএম পরিবহন ইত্যাদি বাসে চড়ে সদরপুর নেমে যাবেন। সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল বা আটরশি দরবার শরিফ যেতে পারবেন। ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ১০ টাকা।
এছাড়া ঢাকা থেকে ফরিদপুরগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনে চড়ে ভাংগা গোল চত্বর থেকে একটি সামনে এগিয়ে পুখুরিয়া নেমে যাবেন। সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে আটরশি দরবার শরীফ যেতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফে ভক্তদের থাকার ব্যবস্থা আছে।
এছাড়া ফরিদপুর শহরের থাকার জন্য আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল রাফেলস ইনন (01711-034727), হোটেল রূপসী বাংলা (01725-157211), হোটেল জে.কে. ইন্টারন্যাশনাল (01756-900400), হোটেল পদ্ধা (01711-227153), হোটেল রয়েল প্যালেস (01761-407170) উল্লেখ্য।
কোথায় খাবেন
আটরশি দরবার শরীফে আগত ভক্তদের সেখানে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া আপনি চাই ফরিদপুর শহরের কয়েকটি নামকরা হোটেল ও রেস্তোরাঁ থেকে খাবার খেতে পারবেন।
ফরিদপুর খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ গুলোর মধ্যে জল খাবার রেস্তোরাঁ, ঢাকাইয়া ভর্তা ভাত, সুইট রেস্তোরাঁ, শাহী রেস্তোরাঁ, নবান্ন রেস্তোরাঁ, রেড চেরি রেস্টুরেন্ট, খন্দকার হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, নিউ স্টার কাবাব হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া খোকা মিয়ার রসগোল্লা, বোয়ালমারীর ইলিশপেটি ও বিভিন্ন গুড়ের পিঠার স্বাদ নিতে ভুলবেন না।





