মথুরাপুর দেউল (Mathurapur Deul) বা মঠ বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলার মধুখালি উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। অনেকের ধারণা এই স্থাপনাটি আনুমানিক ১৬০০ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়। আবার অনেকের ধারণা এটি ১৭০০ শতকের স্থাপনা।
এই দেউলটি ফরিদপুর-মাগুরা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে ১.৫ কিলোমিটার দূরে চন্দনা নদীর তীরে অবস্থিত। দৃষ্টিনন্দন ও শৈল্পিক কারুকার্যমন্ডিত ১২ কোণ বিশিষ্ট দেউলের উচ্চতা প্রায় ৮০ ফুট। দেউলটির ভেতর প্রবেশ করার জন্য দক্ষিণ ও পশ্চিম মুখী ২ টি পথ আছে, এর ভিতর একটি কক্ষ আছে।
স্থাপনাটির মূল গঠন উপাদান চুন-সুরকির মিশ্রণ। দেউলের বাইরের দেয়ালটি লম্বালম্বিভাবে সজ্জিত। পুরো স্থাপনা জুড়ে টেরাকোটার জ্যামিতিক ও বাহারী চিত্রাংকণের পাশাপাশি মাটির ফলকের তৈরি অসংখ্য ছোট ছোট মুর্তির ব্যবহার চোখে পড়ে। এসব মুর্তিগুলো হলো ঘোড়া, পেঁচা, নৃত্যরত নর-নারী, মাথাবিহীন মানুষের প্রতিকৃতি, তীর ধনুক হাতে হনুমান ইত্যাদি। তবে দেউলের কোথাও কোনো লেখা পাওয়া যায়নি। এর গঠন প্রকৃতি অনুসারে এটিকে মন্দির বললে ভুল হবে না।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ২০১৪ সালে মথুরাপুর দেউলটি জাতীয় পুরাকীর্তি স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ সরকারের সুরক্ষিত একটি সম্পদ।
মথুরাপুর দেউলের ইতিহাস
১৬৩৬ সালে ভূষণার বিখ্যাত জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিংকে এলাকার কর আদায়ের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। তৎকালীন শাসকের ছত্রছায়ায় সংগ্রাম সিংক অনেক ক্ষমতাবান হয়ে উঠেন। এরপর তিনি কাপাস্তি গ্রামের এক বৈদ্য পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন এবং মথুরাপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। অনেকের ধারণা এই সংগ্রাম সিং এই দেউল নির্মাণ করেন।
আবার অনেকের ধারণা সম্রাট আকবরের বিখ্যাত সেনাপতি মানসিং রাজা প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের সৃতি হিসেবে এই দেউল নির্মাণ করেন। তবে এই ধারণা অনেকে গ্রহণ যোগ্য বলে মনে করে না।
যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে সড়কপথে বাস বা ট্রেনে চড়ে ফরিদপুর যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ফরিদপুর সরাসরি গোল্ডেলাইন (01755-522200), আজমিরি ইন্টারপ্রাইজ, জাকের ইন্টারপ্রাইজ (01712-424134), সাউদিয়া পরিবহন (01916-136531) ইত্যাদি বাস চলাচল করে।
ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে কমফোর্ট লাইন, সূর্যমুখী পরিবহন, গোল্ডেন লাইন, আনন্দ পরিবহন, সাউথ পরিবহন, রয়েল পরিবহন ইত্যাদি বাস পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকা টু ফরিদপুর রুটে চলাচল করে। ভাড়া জনপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ফরিদপুর আসতে পারবেন। ট্রেনের ভাড়া আসনভেদে ৩০৫ থেকে ৬৯৬ টাকা।
ফরিদপুর শহরের নতুন বাস টার্মিনাল থেকে মধুখালী, মাগুরা, ঝিনাইদহগামী বাসে চড়ে মধুখালী বাজার নেমে যাবেন। বাসে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৩০ টাকা, যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট। মধুখালী বাজার থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে মথুরাপুর দেউল যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
ফরিদপুর জেলা শহরে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল রূপসী বাংলা (01725-157211), হোটেল রয়েল প্যালেস (01761-407170), হোটেল জে.কে. ইন্টারন্যাশনাল (01756-900400), হোটেল রাফেলস ইনন (01711-034727), হোটেল পদ্ধা (01711-227153) উল্লেখ্য।
কোথায় খাবেন
ভালো মানের খাবার জন্য ফরিদপুর শহরে নামকরা অনেক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে জল খাবার রেস্তোরাঁ, সুইট রেস্তোরাঁ, নিউ স্টার কাবাব হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, নবান্ন রেস্তোরাঁ, রেড চেরি রেস্টুরেন্ট, ঢাকাইয়া ভর্তা ভাত, খন্দকার হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, শাহী রেস্তোরাঁ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া খোকা মিয়ার রসগোল্লা, বোয়ালমারীর ইলিশপেটি ও বিভিন্ন গুড়ের পিঠার স্বাদ নিতে ভুলবেন না।





