আস সালাম জামে মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটি, লক্ষীপুর

লক্ষীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কেল্লা এলাকায় অবস্থিত আস সালাম জামে মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটি (As Salam Jame Mosque)। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে রহিমা-মমতাজ ও সাইফ সালাউদ্দিন দোলন এই মসজিদ নির্মাণ করেন।

দেশের সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান আর্কি গ্রাউন্ড লিমিটেড এর পরিচালক নবি নেওয়াজ খান সামিন ও তার সহযোগীরা এই মসজিদের নকশা প্রণয়ন করেন। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে এবং শেষ হয় ২০২১ সালের শেষে। এরপর মসজিদটি মুসল্লিদের নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

পুরো মসজিদে একসাথে প্রায় দুই হাজার মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারে। নামাজের পাশাপাশি এটিকে ঈদগাহ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। মসজিদের পাশে “আস সালাম হাফেজিয়া মাদ্রাসা” তৈরি করা হয়েছে। যেখানে কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষা প্রদান করা হয়। এছাড়া মসজিদের উদ্যোগে একটি গার্লস স্কুল ও কলেজ নির্মাণ করা হবে।

চোখ জুড়ানো স্থাপত্যের জটিল সংমিশ্রণ ও অনন্য স্থাপনা আস সালাম জামে মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটি দেখতে ও নামাজ আদায় করতে লক্ষীপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে।

BM Khalid Hasan Sujon

আস সালাম জামে মসজিদের স্থাপত্যশৈলী ও ইতিহাস

আস্-সালাম জামে মসজিদটি দেশের আধুনিক নির্মাণ শৈলীর অনন্য নজির। এই মসজিদে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে দেশের অন্য কোনো মসজিদে দেখা যায় না।

এই মসজিদটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল দোতলা বিশিষ্ট কিন্তু কোনো জানালা নেই। ভিতরে মুসল্লিদের প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য দুইটি বড় দরজা আছে। জানালা না থাকলেও দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ছাড়াই আলো বাতাস থাকে।

মসজিদটির আরো একটি বৈশিষ্ট্য হল মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা মসজিদের ভেতর বসেই রোদ, বৃষ্টি, কুয়াশা উপভোগ করতে পারে। মসজিদটি এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে ভেরতে রোদ, বৃষ্টি ও কুয়াশা এসে পড়ে। তবে, মুসল্লিরা রোদে পুড়বে না এবং বৃষ্টিতে ভিজবে না।

BM Khalid Hasan Sujon

দোতলা বিশিষ্ট মসজিদটির নিচের তলা দুই ভাগে বিভক্ত। সামনে মসজিদের মূল অংশ ও মেহরাব। এর পিছনে মাঝ বরাবর গলিপথ। তার দুপাশে শীতল জলাধারা ও রোদ বৃষ্টি প্রবেশ পথ। পেছনের অংশে বড় গ্যালারির মসজিদ। যেখানে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। গ্যালারির অংশের পেছনে দোতলায় উঠার সিঁড়ি। দোতলায় মহিলাদের নামাজের স্থান।

মসজিদের ভেতর বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য চারপাশে চারটি জলাধারা আছে। জলাধারা গুলোতে রাখা হয়েছে শীতল পাথর। যাতে গরমের সময় মসজিদকে শীতল করে রাখে।

সম্পূর্ণ মসজিদের দেয়াল বাহিরে থেকে ইটের তৈরি হলেও ভেতরে রড, সিমেন্ট ও ইটের সংমিশ্রণে আরসিসি ঢালাই। পুরো মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর মসজিদটির তথ্যচিত্র সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কনফারেন্সে পাঠানো হয় বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ইকোনো, রয়েল, আলবারাকা, আলম, গ্রীনল্যান্ড এক্সপ্রেস ও ঢাকা এক্সপ্রেস সহ যেকোনো পরিবহনে চড়ে লক্ষীপুর আসবেন। ঢাকা টু লক্ষীপুর জনপ্রতি বাস ভাড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা (পরিবর্তনশীল) এবং যেতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা।

BM Khalid Hasan Sujon

বাস থেকে নেমে লক্ষীপুর ঝুমুর সিনেমা হলের সামনে থেকে লোকাল বাসে চড়ে রামগতি উপজেলা সদর নেমে যাবেন। সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটির আশেপাশে কোথাও থাকার হোটেল ও গেস্ট হাউজ নেই। তাই রাতে থাকার জন্য লক্ষীপুর জেলা শহরে চলে আসুন। সেখানে হোটেল গোলাপ (01860-188302), হোটেল আবেহায়াত (01718-428922), সোনার বাংলা গেস্ট হাউজ (01733-687166), হোটেল ইউনিক, (01732-202256), এন আর গেস্ট হাউজ (01623-619053), স্টার গেস্ট হাউজে (01726-123719) থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

আস্-সালাম জামে মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটি এর আশেপাশে ভালো মানের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট নেই। তাই ভালো মানের খাবার জন্য লক্ষীপুর জেলা শহরে অবস্থিত রাজমহল হোটেল, কুটুম বাড়ি রেস্টুরেন্ট, তৃপ্তি হোটেল, নূর জাহান হোটেল, সেন্ট মার্টিন রেস্টুরেন্ট, মোহাম্মদীয়া হোটেল, আব্বাস আলী রেস্টুরেন্ট, ফুড গার্ডেন রেস্টুরেন্ট থেকে পছন্দসই খাবার খেতে পারেন।

আরো পড়ুন