গজনী অবকাশ কেন্দ্র, শেরপুর

গজনী অবকাশ কেন্দ্র (Gajini Abokash Center) ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। ১৯৯৩ সালে শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৩৩ একর জায়গা জুড়ে গজনী অবকাশ কেন্দ্র বিস্তৃত। বর্তমানে এটি ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।

অবকাশ কেন্দ্রে দেখতে পাবেন সবুজ গাছ, লতাপাতা, উঁচু-নিচু টিলা, পাহাড়ী ঝর্ণা, লেক, ছড়ার স্বচ্ছ পানি ও উপজাতীয়দের ঘরবাড়ি। এখানকার প্রধান গাছের মধ্যে গজারী, শাল ও সেগুন।

এছাড়া কৃত্রিমস্থাপনার মধ্যে ডায়নোসর, জিরাফ, ড্রাগন, হাতি, ধর্ণাধারা, মৎস্যকন্যা, পাতালপুরী, পদ্মা সিঁড়ি, চুকোলুপি পার্ক, স্মৃতিসৌধ, মিনি চিড়িয়াখানা, একুয়ারিয়াম ইত্যাদি। মিনি চিড়িয়াখানায় হরিণ, মেছো বাঘ, ভাল্লুক, অজগর সাপ সহ প্রায় ৪০ প্রজাতির প্রাণী আছে।

এখানে পাহাড়ী ঝর্ণার গতিপথে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম শান্ত জলের লেক তৈরি করা হয়েছে। লেকের শান্ত জলে ময়ূরপঙ্খী নৌকা ও প্যাডেল বোটে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। গজনী অবকাশে রয়েছে ৬৪ ফুট উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার। যেখান থেকে গজনীর সমস্ত সৌন্দর্য একবারে উপভোগ করা যায়।

BM Khalid Hasan Sujon

অবকাশ কেন্দ্রে গারো পাহাড়ের চূড়ায় পর্যটকদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ৬ কক্ষ বিশিষ্ট আধুনিক একটি রেস্ট হাউজ আছে। রেস্ট হাউজ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে যাওয়ার জন্য পদ্মাসিঁড়ি নামক আঁকাবাঁকা সিঁড়িপথ আছে। কৃত্রিম জলপ্রপাতের উপর দিয়ে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার জন্য ক্যাবল কার ও পায়ে হেঁটে যাওয়ার জন্য ঝুলন্ত ব্রীজ আছে।

এছাড়া অবকাশ কেন্দ্রে খেলার মাঠ, পিকনিক স্পট, বিশুদ্ধ খাবার পানি, পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও রান্নার জন্য বড় বড় চুলা আছে। পাহাড়, ঝর্ণা, হ্রদ এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একসাথে উপভোগ করার জন্য প্রত্যেক দিন বহু পর্যটকদের আগমন ঘটে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে।

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে কি কি দেখবেন

অবকাশ কেন্দ্রে ৬৪ ফুট উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার, বাচ্চাদের জন্য শিশুপার্ক, কৃত্রিম জলপ্রপাত, ময়ূরপঙ্খী নৌকা, প্যাডেল বোড, মিনি চিড়িয়াখানা, ক্যাকটাস পল্লী, ঝুলন্ত ব্রিজ, ক্রিন্সেন্ট লেক, পাতাল পথ, ক্যাবেল কার, কাজী নজরুল ও রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিফলক, বিভিন্ন প্রানীর ভাস্কর্য ও গারো পাহাড়ে বসবাসকারী আদিবাসীদের জীবনযাত্রা।

BM Khalid Hasan Sujon

প্রবেশ টিকেট মূল্য

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে জনপ্রতি প্রবেশ টিকেট মূল্য ২০ টাকা, ওয়াচ টাওয়ারের টিকেট মূল্য ১০ টাকা, বিভিন্ন রাইডে চড়ার জন্য ১০ থেকে ৬০ টাকা। 

গাড়ি পাকিং: সিএনজি ৫০ টাকা, প্রাইভেট কার ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, বাস ও ট্রাক ৩০০ টাকা। গেইপাস সংরক্ষণ করে রাখবেন সীমান্তে বিজিবির নকশী ক্যাম্পে গেটপাস দেখাতে হবে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যেতে হলে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াত করা সহজ। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ড্রিমল্যান্ড বাসে শেরপুর বাস টার্মিনাল নেমে যাবেন। এসি / নন-এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। প্রতিদিন দুপুর ২ টায় বাস ছেড়ে যায়।

শেরপুর বাস টার্মিনাল থেকে ১০ টাকা সিএনজি বা অটোরিকশা করে খোয়ারপাড়া শাপলা চত্বর যেতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি ভাড়া করে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যেতে পারবেন। চাইলে সারাদিনের জন্য রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া নিয়ে গজনী পিকনিক স্পট ও মধুটিলা ইকোপার্ক যেতে পারবেন। শেরপুর থেকে গজনী ৩০ কিলোমিটার। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া লাগবে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। ৭-৮ জন একসাথে যেতে পারবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

এছাড়া শেরপুর বাস টার্মিনাল থেকে গজনীগামী লোকাল বাসে ঝিনাইগাতী উপজেলার এসে সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে গজনী যেতে পারবেন। আবার শেরপুর বাস টার্মিনাল থেকে রিজার্ভ মাইক্রোবাস ভাড়া করে অবকাশ কেন্দ্র যেতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

খাবার জন্য ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরে মোটামুটি মানের খাবার হোটেল আছে। ঝিনাইগাতী হোটেল সাইদ ও হোটেল জোসনায় থেকে সাদা ভাত, মাংস, মাছ, ডিম, সবজি, ডাল, সালাদ ইত্যাদি খেতে পারবেন।

ভালো মানের খাবার খেতে শেরপুর জেলা শহর থেকে খাবার খেতে পারবেন। শেরপুর নিউ মার্কেট এলাকায় হোটেল প্রিন্স, হোটেল শাহজাহান ও হোটেল আহার থেকে পছন্দসই খাবার খেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

ঝিনাইগাতী উপজেলার বন বিভাগের রেস্ট হাউজ ও ডাকবাংলোতে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারবেন। এছাড়া শেরপুর সার্কিট হাউস (0931-61513), সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি ও পল্লী বিদ্যুৎ এর রেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন। গজনী অবকাশ কেন্দ্রের রেস্ট হাউজে থাকতে চাইলে সময় ভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা রুম ভাড়া লাগবে।

শেরপুর মাঝামাঝি মানের আবাসিক হোটেল কাকলী (01914-854450), হোটেল সম্পদ (01718-290447), ভবানী প্লাজা, হোটেল সাইদ (0931-61776) এ ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায় থাকতে পারবেন। শেরপুর আবাসিক হোটেল এর বিস্তারিত তথ্য জানুন।

সর্তকতা

অবকাশ কেন্দ্র ভারত সীমান্তবর্তী তাই সীমান্তের দিকে না যাওয়া ভালো। যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে শেরপুর জেলা প্রশাসককে ফোন করুন। ফোন নাম্বার 01740-602411, 01737-294849.

আরো পড়ুন