করটিয়া জমিদার বাড়ি, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল জেলায় যতগুলো জমিদার বাড়ি রয়েছে তার মধ্যে করটিয়া জমিদার বাড়ি (Karatia Jamidar Bari) অন্যতম। ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে পুটিয়ার নদীর তীরে করটিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রাকৃতিক ও নিরিবিলি পরিবেশে মোগল ও চৈনিক স্থাপত্য কৌশলে জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী এই জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। স্থানীয়দের কাছে এই জমিদার বাড়িটি করটিয়া (Karatia Rajbari) রাজবাড়ী হিসেবেও পরিচিত।

করটিয়া জমিদার বাড়ির দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ০.৫ কিলোমিটার। বাড়ির চারদিকে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীরঘেরা জমিদার বাড়িতে রয়েছে লোহার ঘর, রোকেয়া মহল, রাণীর পুকুরঘাট, ছোট তরফ দাউদ মহল ও মোগল স্থাপত্যের আদলে গড়া ঐতিহাসিক মসজিদ। মসজিদে ১৫ ফুট উঁচু একটি মিনার ও ৮ টি গম্বুজ রয়েছে।

মোগল ও চৈনিক স্থাপত্যের আদলে গড়া এই জমিদার বাড়িটি যেকোউ প্রথম দেখলে তার প্রেমে পড়ে যাবে। বিশেষ করে রোকেয়া হল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মর্যাদা পাওয়ার দাবি রাখে কিন্তু এটি বিদ্যালয় ও কোচিং সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

করটিয়া জমিদার বাড়ি যাওয়ার উপায়

রাজধানী ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ধলেশ্বরী, নিরালা, বিনিময় ইত্যাদি বাসে চড়ে করটিয়া বাইপাসের কাছে নেমে যাবেন। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের দূরত্ব প্রায় ৮৪ কিলোমিটার। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এবং যেতে সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘন্টা। করটিয়া বাইপাস থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে সরাসরি করটিয়া জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন। রিকশা ভাড়া লাগবে ২০ থেকে ২৫ টাকা।

এছাড়া যারা ট্রেনে যেতে চান তারা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে উত্তরবঙ্গগামী যে ট্রেন টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশন থামে উক্ত ট্রেনে চড়ে টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশন নেমে সিএনজি বা অটোরিকশা করে জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন। একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন উত্তরবঙ্গগামী কোন ট্রেন টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রা বিতরিত করে।

কোথায় খাবেন

টাঙ্গাইল শহরে খাবার জন্য বিভিন্ন মানের অনেক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল নিরালা, নূরজাহান রেস্টুরেন্ট এন্ড পার্টি ভেন্যু, লাজিজ, মেজবান দাওয়াত রেস্টুরেন্ট ও জজ কোর্ট হোটেল, সানকি রেস্টুরেন্ট, সুগন্ধা রেস্টুরেন্ট বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়া টাঙ্গাইলের বিখ্যাত পোড়াবাড়ির চমচম মিষ্টি অবশ্যই খেয়ে দেখবেন।

কোথায় থাকবেন

টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল সাগর (0921-54308), আফরিন হোটেল (01916-782389), সুগন্ধা হোটেল (01674-346815), নিরালা হোটেল (0921-61363), পিয়াসি হোটেল (01711-352493), হোটেল আদিত্য (01716-796065), হোটেল ড্রিম টাচ (01717-218799), শালবন রেসিডেনসিয়াল হোটেল (01713-462103), যমুনা রিসোর্ট লিমিটেড (09239-76032-4), এলেঙ্গা রিসোর্ট লিমিটেড (02-9884322) উল্লেখযোগ্য।

BM Khalid Hasan Sujon

এছাড়া এলজিইডির সরকারি গেস্ট হাউজ (0921-54261)ও পল্লী বিদ্যুৎ এর গেস্ট হাউজে (0921-53390) অনুমতি নিয়ে থাকতে পারেন। টাঙ্গাইল আবাসিক হোটেল সমূহের বিস্তারিত তথ্য জানুন।

করটিয়া জমিদার বাড়ি ভ্রমণের সময়সূচি ও পরামর্শ

বর্তমানে জমিদার বাড়ির মূল গেইটে তালাবদ্ধ রাখা হয় এবং প্রাচীর সীমানার ভেতর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তাই আপনি যদি জমিদার বাড়ি পরিদর্শন করতে চান তাহলে আগেই জেনে নিবেন ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন কিনা।

তবে, স্থানীয় ব্যাক্তিদের কাছ থেকে জানা যায় প্রতিবছর বাংলা বৈশাখ মাসের ১ থেকে ১২ তারিখ এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এর সময় জমিদার বাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

করটিয়া জমিদারবাড়ি ছাড়াও টাঙ্গাইল জেলায় অনেক দর্শনীয় স্থান ও জমিদার বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, মহেরা জমিদার বাড়ি, নাগরপুর জমিদার বাড়ি, দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি, ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি, মাওলানা ভাসানী সমাধি ও জাদুঘর উল্লেখযোগ্য।

BM Khalid Hasan Sujon

আরো পড়ুন