মধুটিলা ইকোপার্ক, শেরপুর

রাজধানী ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার এবং শেরপুর জেলা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাও ইউনিয়ন এ অবস্থিত মধুটিলা ইকোপার্ক (Madhutila Eco Park). প্রায় ৩৮৩ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা এই বনকে ১৯৯৯ সালে পরিবেশ-উদ্যান বা ইকোপার্ক ঘোষণা করে।

মধুটিলা ইকোপার্কের মেইন গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখতে পাবেন উঁচু গাছের সারি, ডান পাশে খোলা প্রান্তর এবং দুপাশে বিভিন্ন রকম পণ্যের দোকান। রেস্তোরাঁ থেকে সামনে এগিয়ে গেলে পাহাড়ি ঢালুর আঁকাবাঁকা রাস্তা। পাহাড়ের প্রবেশ পথে রয়েছে দুইটি হাতির মূর্তি।

সামনের দিকে যতই এগিয়ে যাবেন ততই প্রকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। পথে বুনো গাছ-গাছালির মাঝে ফুটে আছে হরের রকমের বুনো ফুল, ফুলে নানা প্রজাতির প্রজাপতি।

এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার পথে দেখা মিলতে পারে হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, ক্যাঙ্গরু, কুমির, প্যাঁচা, ঈগল, বানর, ব্যাঙ ও মৎস্য কন্যার চমৎকার সব ভাস্কর্য। ইকোপার্কের ভিতর রয়েছে হ্রদ। হ্রদে প্যাডেল বোট চালিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

ইকোপার্কের সৌন্দর্য এক নজরে উপভোগ করার জন্য একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। ওয়াচ টাওয়ারে উঠে ইকোপার্ক সহ ভারতে অবস্থিত উঁচু উঁচু পাহাড় দেখতে পাবেন। ভাগ্য ভালো থাকলে ওয়াচ টাওয়ার থেকে বুনো হাতির দলের দেখা পাবেন। বিকালে বা সন্ধ্যার সময় বুনো হাতির দলের দেখা পাওয়া যায়।

ইকোপার্কে বাচ্চাদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য শিশুপার্ক আছে। এছাড়া ডিসপ্লে মডেল, ক্যানটিন, মিনি চিড়িয়াখানা, গাড়ি পাকিং জোন, তথ্যকেন্দ্র ও বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট আছে। বিভিন্ন প্রজাতির  গাছ, মৌসুমি ফল ও ফুল সহ বিভিন্ন রঙের গোলাপ বাগান রয়েছে।

ইকোপার্কের ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের দিনের বেলায় বিশ্রাম করার জন্য পাহাড়ের চূড়ায় মহুয়া রেস্ট হাউজ রয়েছে। এই রেস্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে ময়মনসিংহ বা শেরপুর বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এই রেস্ট হাউজে রাতে থাকার অনুমতি নেই।

মধুটিলা ইকোপার্কের কাছে গজনী অবকাশ কেন্দ্র আছে, হাতে সময় নিয়ে অবশ্যই সেখান থেকে ঘুরে আসবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

মধুটিলা ইকোপার্ক প্রবেশ টিকেট মূল্য

মধুটিলা ইকোপার্কের প্রবেশ টিকেট মূল্য ২০ টাকা, ওয়াচ টাওয়ার উঠার টিকেট ১০ টাকা এবং বিভিন্ন রাইড চড়ার জন্য ২০ থেকে ৪০ টাকা খরচ করতে হবে।

কিভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে তুরাগ, ড্রিমল্যান্ড, আনন্দ ইত্যাদি পরিবহনের বাসে চড়ে শেরপুর যেতে পারবেন। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। মহাখালী থেকে প্রতিদিন দুপুর ২ টায় বাস ছেড়ে যায়। চাইলে ড্রিমল্যান্ড পরিবহনের এসি / নন-এসি পরিবহনে যেতে পারবেন। ভাড়া লাগবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। শেরপুর নেমে সিএনজি বা অটোরিকশা করে সরাসরি মধুটিলা ইকোপার্কে যেতে পারবেন। শেরপুর থেকে ইকোপার্কের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার।

আবার শেরপুর বাস টার্মিনাল থেকে ১০ টাকা অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে শাপলা চত্বর এবং শাপলা চত্বর থেকে ৬০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে নন্নি বাজার এবং নন্নি বাজার থেকে ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে মধুটিলা ইকোপার্ক বা পিকনিক স্পটে যেতে পারবেন।

BM Khalid Hasan Sujon

অথবা শাপলা চত্বর থেকে মধুটিলা ও গজনী যাওয়ার জন্য রিজার্ভ সিএনজি পাওয়া যায়। সারাদিনের জন্য ঘুরে দেখতে ভাড়া লাগবে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। একটি সিএনজিতে ৭-৮ জন যেতে পারবেন।

এছাড়া ঢাকা থেকে রিজার্ভ প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, বাস বা নিমিবাস রিজার্ভ ভাড়া নিয়ে মধুটিলা ইকোপার্কে যেতে পারেন।

কোথায় খাবেন

খাবার জন্য শেরপুর বাজারে ভালো মানের খাবার হোটেল রয়েছে। শেরপুর নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থিত হোটেল আহার, হোটেল প্রিন্স ও হোটেল শাহাজান থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারেন। এছাড়া শেরপুরের বিখ্যাত ছানার পায়েস খেয়ে দেখবেন।

কোথায় থাকবেন

রাজধানী ঢাকা থেতে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে মধুটিলা ইকোপার্ক হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটকেরা দিনে গিয়ে ঘুরে ফিরে আসেন। আর যারা শেরপুর থাকতে চান তারা কাকলী গেস্ট হাউজ (01914-854450), হোটেল সম্পদ(01712-422145), বর্ণালী গেস্ট হাউজ (0931-61575) ও ভবানী প্লাজা আবাসিক হোটেলে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় থাকতে পারবেন।

এছাড়া শেরপুর সার্কিট হাউস (0931-61245), পল্লী বিদ্যুৎ, এলজিইডি ও এটিআই এর পৃথক পৃথক রেস্ট হাউজে অনুমতি নিতে থাকতে পারবেন। শেরপুর আবাসিক হোটেল সমূহের বিস্তারিত তথ্য জানুন।

আরো পড়ুন