পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স, কিশোরগঞ্জ

রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১০২ কিলোমিটার দূরে কিশোরগঞ্জের কারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে পাগলা মসজিদ (Pagla Masjid) বা পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স (Pagla Masjid And Islamic Complex) অবস্থিত। প্রায় ২৫০০ বছরের পুরাতন এই মসজিদটি মুসলমান সহ সকল ধর্মের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি শুক্রবার এখানে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে জুম্মা নামাজ আদায় ও দান করার জন্য।

পাগলা মসজিদে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে। ভক্তরা তাদের মনের বাসনা পূর্ণ করার জন্য টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা-রূপা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, চাল-ডাল সহ অসংখ্য জিনিসপত্র দান করে থাকেন। দান পাবার দিক থেকে মসজিদটি বাংলাদেশে সর্বাধিক আলোচিত।

মসজিদের স্থাপত্য শৈলী

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের জমির পরিমাণ ৩ একর ৮৮ শতাংশ। শুরুর দিকে হয়বতনগর দেওয়ানবাড়ির ওয়াকফকৃত ১০ শতাংশ জমি মসজিদে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

BM Khalid Hasan Sujon

৩ তলা বিশিষ্ট পাগলা মসজিদের ছাদে বড় বড় ৩ টি গম্বুজ এবং ৫ তলা ভবনের সমান উঁচু একটি মিনার রয়েছে। মসজিদের সামনে মুসল্লিদের অজু ও গোসল করার জন্য একটি পুকুর রয়েছে।

তিন তলা বিশিষ্ট মসজিদে একবারে প্রায় ১ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদে নারী পুরুষ উভয়ের জন্য নামাজ আদায় করার পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের রাতের বিভিন্ন রঙের আলোকসজ্জা দেখতে ভালো লাগে।

পাগলা মসজিদের ইতিহাস

পাগলা মসজিদের ইতিহাস ঘেটে যানা যায় পাগলবেশী একজন আধ্যাত্নিক সাধন নরসুন্দা নদীতে মাদুরে ভেসে বর্তমান মসজিদ স্থানে অবস্থান নেন। পাগল সাধকের বিস্ময়কর ক্ষমতায় ধীরে ধীরে তাঁকে ঘিরে ভক্তদের সমাগম বৃদ্ধি হতে থাকে।

আধ্যাত্নিক পাগল সাধকের মৃত্যুর পর সেখানে তাঁকে কবর দেওয়া হয় এবং কবরের পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। পাগল সাধকের নাম অনুসারে বর্তমানে পাগলা মসজিদ দেশ জুড়ে সুপরিচিত লাভ করেছে।

BM Khalid Hasan Sujon

অন্য জনশ্রুতি থেকে জানা যায় প্রাচীন বাংলার ১২ ভুঁইয়ার একজন বীর ঈসাখাঁ এর পঞ্চম পুরুষ হয়বতনগরের প্রতিষ্ঠাতা দেওয়ান হয়বত দাত খানের দৌহিত্র জিলকদর খান ওরফে জিলকদর পাগল সাহেব ধ্যানমগ্ন হয়ে এখানে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে তার নামানুসারে পাগলা মসজিদ নামকরণ করা হয়।

অন্য জনশ্রুতি থেকে জানা যায় হয়বতনগর এলাকার জমিদার দেওয়ান হয়বত দাত খানের অধস্তন তৃতীয় পুরুষ জোলকরণ খানের বিবি আয়শা খান স্বপ্নদিষ্ট হয়ে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রজারা তাকে পাগলা বিবি বলে ডাকতেন।

পাগলা মসজিদ কেন বিখ্যাত এবং এত দানের কারণ

পাগলা মসজিদ সকল ধর্মের মানুষের কাছে এক সার্বজনীন পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র। এখানে দান করা মানুষেরা বিশ্বাস করে দান করলে তার মনেন বাসনা পূর্ণ হয়। এই বিশ্বাসের কারণে পাগলা মসজিদে মানুষের কাছে বিখ্যাত এবং এখানে প্রচুর টাকা-পয়সা  ও মূল্যবান জিনিসপত্র দান করে।

এখানে মানুষ মনের বাসনা পূর্ণ করার জন্য মানত ও প্রচুর টাকা-পয়সা, স্বর্ণলস্কার, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, চাল-ডাল এমনকি বৈদেশিক মুদ্রা ও দান করে।

BM Khalid Hasan Sujon

৩-৪ মাস পরপর যখন দানের সিন্দক গুলো খোলা হয় তখন প্রতিবার আগের চেয়ে বেশি পরিমান টাকা পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল পাগলা মসজিদের ১১ টি দান সিন্দুক খুলে নগদ ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা ও অনেক স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে। বর্তমানে প্রায় ৯০ কোটি টাকা পাগলা মসজিদের ব্যাংক একাউন্টে জমা রয়েছে।

পাগলা মসজিদে অনলাইন দান

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনে পাগলা মসজিদের ওয়েবসাইটে দান করতে পারবেন। ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০, ১০০০ থেকে শুরু করে পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে যেকোনো পরিমান টাকা দান করতে পারবেন।

পেমেন্ট ওয়েবসাইটটি হলো www.paglamosque.org. এই ওয়েবসাইটে গিয়ে DONATE NOW অপশনে ক্লিক করে বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে পাগলা মসজিদে দান করতে পারবেন।

মনে রাখবেন কিশোরগঞ্জ পাগলা মসজিদের কোনো বিকাশ নাম্বার নেই। যারা দান করতে চান অনলাইন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দান করুন।

পাগলা মসজিদের দানের টাকা কি কাজে ব্যবহার হয়

পাগলা মসজিদের দানের টাকা ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের বেতন এবং মসজিদের বিভিন্নভাবে কাজে খরচ করা হয়। এছাড়া দানের টাকা মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ব্যায় করা হয়। আশেপাশের মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ব্যায় করা হয়

আবার কিছু টাকা আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সহয়তা ও দুস্থ মানুষের কল্যাণে ব্যায় করা হয়। বর্তমানে ৬ তলা বিশিষ্ট পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।

কিশোরগঞ্জ পাগলা মসজিদ ভ্রমণে যাওয়ার উপায়

কিশোরগঞ্জ সদর জেলা গুরুদয়াল সরকারি কলেজ এবং আধুনিক সদর হাসপাতাল এর পাশে অবস্থিত ঐতিহাসিক কিশোরগঞ্জ পাগলা মসজিদ। কিশোরগঞ্জ সদর জেলা শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে যেতে ভাড়া লাগবে ৫-১০ টাকা।

বাসে ঢাকা টু কিশোরগঞ্জ

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে যাতায়াত, অনন্যা সুপার এবং মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহণ, অনন্যা ক্লাসিক ইত্যাদি বাসে চড়ে কিশোরগঞ্জ যেতে পারবেন। জনপ্রতি বাস ভাড়া ৩৫০-৪০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে সায়েদাবাদ থেকে প্রায় ৪ ঘন্টা এবং মহাখালী থেকে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা। কিশোরগঞ্জ বাস টার্মিনাল থেকে পাগলা মসজিদ যেতে সিএনজি বা অটোরিকশা ভাড়া ৪০ টাকা।

ট্রেনে ঢাকা টু কিশোরগঞ্জ

ঢাকার কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জ ৩ টি আন্তঃনগর ট্রেন ছেড়ে যায়। সকাল ০৭:১৫ মিনিটে এগারোসিন্ধুর প্রভাতী এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় কিশোরগঞ্জ। শ্রোণী ভেদে ভাড়া ১৩৫ থেকে ৩৬৮ টাকা। ট্রেনে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা। কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে পাগলা মসজিদ যেতে পারবেন। ভাড়া লাগবে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন রোড়ে রাত্রিযাপনের জন্য হোটেল নিরালা, রিভার ভিউ, গাংচিল, উজান ভাটি, শেরাটন, রয়েল, হোটেল পার্ক, ক্যাসেল সালাম সহ বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া জেলা সরকারি রেস্ট হাউজ ও ডাকবাংলোতে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

কিশোরগঞ্জ শহরে খাবার জন্য পানসী, ধানসিঁড়ি, তাজ, গাংচিল, দোসাই রেস্টুরেন্ট সহ আরো অনেক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। যারা মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন তারা একরামপুরের লক্ষী নারায়ণ মিষ্টান্ন থেকে মিষ্টি খেতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

কিশোরগঞ্জের দর্শনীয় স্থান সমূহ মধ্যে নিকলী হাওর, মিঠামইন হাওর, শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দূর্গ, কিশোরগঞ্জ লেক পার্ক, গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, কবি চন্দ্রাবতীর মন্দির, বালিখলা উল্লেখযোগ্য।

আরো পড়ুন