দুবলার চর, সুন্দরবন – যাওয়ার উপায় ও খরচ

দুবলার চর (Dublar char) বাংলাদেশের সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদীর মাঝখানে জেগে উঠেছে বিচ্ছিন্ন এই চর। হিন্দুধর্মালম্বীদের রাসমেলা, পূণ্যস্নান ও হরিণ দেখার জন্য সুপরিচিত একটি স্থান।

আলোরকোল, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারিকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয় ও মেহের আলির চর নিয়ে গঠিত দুবলার চর। যার মোট আয়তন ৮১ বর্গ মাইল। এখানে শুধুমাত্র টেলিটক সিমের নেটওয়ার্ক পায়।

দুবলার চরে বসবাস করা সকল পরিবারই মৎস্যজীবী তাই এই চরকে জেলে পল্লী বলা হয়। এই জেলে পল্লীতে মাছ ধরার পরে সেগুলোকে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি মাছ তৈরির কাজ করা হয়। যা বাংলাদেশের শুঁটকি উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

প্রত্যেক বছর বর্ষা মৌসুম শেষে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার সহ বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো জেলে দুবলার চরে এসে সাময়িক বসতি স্থাপন করে। বছরের এই ৫ মাস তারা মাছ শিকার ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে ব্যাস্ত থাকেন।

BM Khalid Hasan Sujon

সুন্দরবনের বাগেরহাট পূর্ব বন বিভাগের সদর দপ্তর থেকে জেলেদের দুবলার চরে মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে এখানে প্রবেশ করতে হয়। সরকার এখান থেকে প্রচুর পরিমানে রাজস্ব পেয়ে থাকে।

প্রত্যেক বছর কার্ত্তিক মাসে (নভেম্বর) হিন্দুধর্মালম্বীদের রাসমেলা ও পূণ্যস্নানের জন্য এই চরটি বিখ্যাত। স্থানীয় লোকে মুখে শোনা যায় প্রায় ২০০ বছর ধরে এই রাসমেলা হয়ে চলেছে। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে হরিচাঁদ ঠাকুরের এক বনবাসী ভক্ত হরিভজন এই মেলা চালু করেন।

রাসমেলা উপলক্ষে প্রত্যেক বছর দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য পুণ্যার্থী এখানে সমুদ্রস্নান করতে আসেন। সূর্যোদয় দেখে ভক্তরা সমুদ্রের জলে ফল ভাসিয়ে দেয়। কেউবা আবার বাদ্যযন্র বাজিয়ে ভজন-কীর্তন করে চারপাশ মুখরিত করেন।

এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা

BM Khalid Hasan Sujon

কি কি দেখবেন

দুবলার চর শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। এছাড়াও চরে হাঁটলে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী, জলজ উদ্ভিদ ও নানা প্রজাতির মাছের দেখা পাবেন। প্রতিবছর কার্ত্তিক মাসে এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের রাসমেলা ও পূণ্যস্নান উপলক্ষে ৩ দিন ব্যাপি মেলার আয়োজন করা হয়।

দুবলার চর যাওয়ার উপায়

ঢাকার সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে সুন্দরবন ও পর্যটক সার্ভিসের বাসে সরাসরি মোংলা আসতে পারবেন। নন-এসি বাস ভাড়া জনপ্রতি ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা।

আবার ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান বাস স্টেশন থেকে সোহাগ, সাকুরা, মেঘলা, পর্যটক পরিবহনের বাসে চড়ে সরাসরি বাগেরহাট আসতে পারবেন। নন-এসি / এসি বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ১,৩০০ টাকা।

বাগেরহাটের মোংলা ফেরি ঘাট থেকে দুবলার চর যাওয়ার জন্য লঞ্চ বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা পেয়ে যাবেন। চাইলে “সুন্দরবন ভ্রমণ” যেকোনো ট্যুরিস্ট এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে দুবলার চর সহ সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে দেখে আসতে পারেন।

BM Khalid Hasan Sujon

কোথায় থাকবেন

যে ট্যুরিস্ট এজেন্সির সাথে দুবলার চর ভ্রমণে যাবেন তারা আপনার থাকা-খাওয়া সহ সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে। ট্যুরিস্ট এজেন্সির লঞ্চে থাকার জন্য কেবিন রয়েছে, সেখানে থাকতে পারবেন।

এছাড়া হিরণ পয়েন্ট নীলকমল ও টাইগার পয়েন্টের কচিখালি ৩,০০০ টাকায় দেশি পর্যটক ও ৫,০০০ টাকায় বিদেশি পর্যটক থাকতে পারবেন। কটকা বন বিভাগের রেস্টহাউজে ২,০০০ টাকায় দেশি পর্যটক ও ৫,০০০ টাকায় বিদেশি পর্যটক থাকতে পারবেন।

সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলা থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলে আপনার বাজেট অনুযায়ী থাকতে পারবেন।

আরো পড়ুন