হিরন পয়েন্ট ভ্রমণ গাইড – যাওয়ার উপায়, খরচ ও পরামর্শ
হিরন পয়েন্ট (Hiron point) সুন্দরবনের দক্ষিণাংশে খুলনা রেঞ্জে প্রমত্তা কুঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্য। এর আরেক নাম নীলকমল। হিরন পয়েন্ট ইউনেস্কো ঘোষিত অন্যতম একটি বিশ্ব ঐতিহ্য।
১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ অক্টোবর হিরন পয়েন্ট থেকে ১৯শ শতাব্দের সর্বশেষ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিলো। এই সূর্যগ্রহণটি ২ মিনিট ১০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিলো।
হিরন পয়েন্ট অভয়ারণ্য হওয়ার কারণে এখানে বানর, হরিণ, বাঘ সহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও পাখির নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। যার ফলে এখানে খুব সহজে হরিণ, বানর, বাঘ, শুকর, কুমির, গুইসাপ ও নানা প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া যায়।
নীলকমল নদীর আশেপাশের জঙ্গলে অসংখ্য হরিণের আধিক্য চোখে পড়ে। এখানে হরিণের অবাধ বিচরণের জন্যই এই স্থানকে হিরণ পয়েন্ট নামে অভিহিত করা হয়। সুন্দরবন বনের সবচেয়ে বেশি বাঘের দেখা এখানেই মিলে।
হিরণ পয়েন্টে কাঠের তৈরি ট্রেইলে হাঁটতে হাঁটতে হরিণ, বানর, কুমির, গুইসাপ, বুনো শুকর সহ নানা প্রজাতির প্রাণীর দেখা মিলে। এখান থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে কেওড়াসুঠিতে একটি ওয়াচ-টাওয়ার রয়েছে। ওয়াচ-টাওয়ার থেকে হিরন পয়েন্ট সহ সুন্দরবনের একাংশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
হিরন পয়েন্ট ভ্রমণ খরচ
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অভয়ারণ্য এলাকায় জনপ্রতি ভ্রমণ ফি ৩০ টাকা, সাধারণ পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি ১৫০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি ১,৫০০ টাকা।
অভয়ারণ্যের বাহিরে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ভ্রমণ ফি ২০ টাকা, সাধারণ পর্যটকদের ভ্রমণ ফি ৭০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ ফি ১,০০০ টাকা ও গবেষকদের জন্য ভ্রমণ ফি ৪০ টাকা।
এছাড়া সুন্দরবন গাইড ফি ৫০০ টাকা, নিরাপত্তা গার্ড ফি ৩০০ টাকা, টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা, লঞ্চের ক্রুজ ফি ৭০ টাকা। দেশি পর্যটকদের জন্য ক্যামেরা ম্যান ফি ২০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের ৩০০ টাকা।
সুন্দরবনে রাস পূর্ণিমার সময় তীর্থযাত্রীদের ৩ দিনের ভ্রমণ ফি জনপ্রতি ৫০ টাকা, ট্রলার নিবন্ধনকৃত ফি ২০০ টাকা, অনিবন্ধনকৃত ট্রলার ফি ৮০০ টাকা এবং ট্রলার প্রতিদিন অবস্থান ফি ২০০ টাকা।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে সরাসরি মোংলা যাওয়ার বাস সার্ভিস রয়েছে। সুন্দরবন ও পর্যটক বাসে জনপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে মোংলা যেতে পারবেন। এছাড়া ঢাকার গাবতলী থেকে সাকুরা পরিবহন (01711-101450), সোহাগ পরিবহন (01718-679302) বাস ছেড়ে যায়।
এছাড়া ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে খুলনা এসে খুলনার রুপসা ও বাগেরহাটের মোংলা বন্দর থেকে সুন্দরবনের হিরন পয়েন্ট যাওয়ার শীপ বা লঞ্চ পাবেন। আবার বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা থেকে হিরন পয়েন্ট ভ্রমণে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
সুন্দরবনের হিরন পয়েন্টের নীলকমল, টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কটকা বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকতে পারবেন। নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য রুম ভাড়া ৩,০০০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ৫,০০০ টাকা।
কচিখালি দেশি পর্যটকদের জন্য রুম ভাড়া ৩,০০০ টাকা ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য রুম ভাড়া ৫,০০০ টাকা। কটকা বন বিভাগের রেস্টহাউজে দেশি পর্যটকদের জন্য রুম ভাড়া ২,০০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য রুম ভাড়া ৫,০০০ টাকা।
মোংলা থাকার জন্য পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল রয়েছে। এছাড়া মোংলা পশুর বন্দরে থাকার জন্য বেশি কিছু সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। খুলনা ও সাতক্ষীরা শহরে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে।
পরামর্শ
- হিরন পয়েন্ট মোবাইল নেটওয়ার্ক পায় না, তাই টেলিটক সিম ব্যবহার করুন।
- বন বিভাগের নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়া গহীন বনের ভেতর প্রবেশ করবেন না।
- কাঠের ট্রেইলে হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
- উচ্চ শব্দে কথা বা আওয়াজ করবেন না।
- গাইডের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করুন।
- বনের ভেতর একা একা যাবেন না, একসাথে যেতে পারেন।
- বনের পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করবেন না।
- বনের পশু-পাখি শিকার করা থেকে বিরত থাকুন।
- বানরকে উপ্তত্ত করবেন না।
আরো পড়ুন
- করমজল সুন্দরবন
- জংগল বাড়ি রিসোর্ট সুন্দরবন
- বনবাস ইকো ভিলেজ
- বনবিবি ফরেষ্ট রিসোর্ট
- ইরাবতী ইকো রিসোর্ট, সুন্দরবন
- কটকা সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন
- সুন্দরবন রিসোর্ট সমূহ