শ্রীমঙ্গল চিড়িয়াখানা – বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন

শ্রীমঙ্গল চিড়িয়াখানা (Sreemangal Zoo) যা স্থানীয় মানুষের কাছে সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা নামে পরিচিত। চিড়িয়াখানাটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে রামকৃষ্ণ মিশন রোড়ে ১.৮০ একর জায়গা জুড়ে সিতেশ রঞ্জন বাবুর রুপস্পুর মৎস্য খামার বাড়িতে অবস্থিত। সিতেশ বাবুর নিজ উদ্যাগে গড়ে তোলা এই চিড়িয়াখানাটি বর্তমানে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন।

বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গল শহরের কাছাকাছি চিড়িয়াখানাটি অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন দেশি-বিদেশী পর্যটকদের আগমন ঘটে। চিড়িয়াখানায় সংরক্ষিত বিরল প্রজাতির প্রাণীদের উপর অনেক দেশি-বিদেশী গবেষকগণ গবেষণা করছেন।

সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানার ইতিহাস

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে সিতেশ বাবুর পিতা নিজের তত্ত্বাবধানে নোয়াগাঁয়ের নিজ বাড়িতে ছোট একটি চিড়িয়াখানা গড়ে তুলে। ১৯৭১ সালের পর সিতেশ বাবু তার নিজের শখের বসে নিজ বাড়িতে চিড়িয়াখানাটি আরো বড় করে গড়ে তুলেছিলেন।

BM Khalid Hasan Sujon

২০০৯ সালে চিড়িয়াখানার জায়গা সংকুলান না হওয়ার শ্রীমঙ্গল শহরের কাছাকাছি ১.৮০ একর জায়গা জুড়ে সিতেশ রঞ্জন বাবুর মৎস্য খামারবাড়িতে চিড়িয়াখানাটি স্থানান্তর করেন। চিড়িয়াখানাটি বর্তমানে তার ছেলে সজল দেব পরিচালনা করেন।

জানা যায় সিতেশ রঞ্জন দেব এক সময় দুর্দান্ত শিকারি ছিলেন। ছোট থেকে তার পিতার সাথে থাকতে থাকতে জীবজন্তুর প্রোমী হয়ে উঠেন। ১৯৯১ সালে কমলগঞ্জের পত্রখোলা চা বাগান শিকারে গিয়ে একটি ভাল্লুক তার উপর আক্রমন করেন। ভাল্লুকের থাবায় তার তার ডান চোখসহ গালের অনেকটা হারিয়ে যায়। টানা ২ মাস চিকিৎসায় সুস্থ হলেও মুখের চেহারায় ভয়াল থাবার ছাপ এখনো রয়েছে।

শ্রীমঙ্গল চিড়িয়াখানায় কি কি দেখবেন

শ্রীমঙ্গল সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় অনেক প্রাণী সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে মায়া হরিণ, সোনালী হনুমান, সজারু, মেছোবাঘ, সাদা বাঘ (বিলুপ্তপ্রায়), বিরল প্রজাতির সোনালী বাঘ, গন্ধগোকুল, লজ্জাবতী বানর, লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি, হনুমান, চিত্রা হরিণ, বনরুই, খরগোশ, অজগর সাপ, কচ্ছপ, সোনালী খাটাশ সহ প্রায় ১৫০ প্রজাতির জীবজন্তু।

এছাড়া বন্য রাজহাঁস, লেঞ্জা, ধলা বালিহাঁস, প্যারিহাঁস, কোয়েল, লাভবার্ড, হিমালয়ান টিয়া, ময়না, বাজিরিক, শঙ্খ চিল, তোতা, হরিয়াল, কাসে-চড়া, কালিম, সবুজ ঘুঘু, পাহাড়ি বক, ডাহুক, কবুতর,  নিষি বক সহ নানা প্রজাতির পাখি।

BM Khalid Hasan Sujon

সময়সূচী ও প্রবেশ টিকেট মূল্য

চিড়িয়াখানা প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। জনপ্রতি প্রবেশ টিকেট মূল্য ২৫ টাকা।

কিভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে চড়ে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ পরিবহন (01713-201732), এনা পরিবহন (01958-135148), শ্যামলী পরিবহন (02-7550071), বিআরটিসি পরিবহন (41051337) সহ অন্যান্য পরিবহনে চড়ে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। ঢাকা টু শ্রীমঙ্গল নন-এসি বাস ভাড়া ৫৭০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ১,০০০ টাকা।

কমলাপুর রেলস্টেশন উপবন এক্সপ্রেস প্রতি বুধবার বাদে রাত ১০ টায়, কালনী এক্সপ্রেস প্রতি শুক্রবার বাদে দুপুর ২ টা ৫৫ মিনিটে, পারাবত এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গলবার বাদে সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে এবং জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গলবার বাদে সকাল ১১ টা ১৫ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনের সিট ভেদে ভাড়া ২৪০ থেকে ৮২৮ টাকা। সিলেট থেকে যেকোনো ট্রেনে চড়ে শ্রীমঙ্গল আসতে পারবেন। 

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা চড়ে সরাসরি চিড়িয়াখানায় যেতে পারবেন। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ১০ টাকা এবং যেতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট।

BM Khalid Hasan Sujon

কোথায় থাকবেন

শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য অনেক ভালো মানের রিসোর্ট রয়েছে। এছাড়া চা বাগানের ভিতর বা পাশে সরকারি বেসরকারি অনেক কটেজ ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। চাইলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশে গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট (01552-683454) এ রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

এছাড়া শ্রীমঙ্গল শহরে মোটামুটি মানের অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল মেরিনা (01787-333544), হোটেল মহসিন প্লাজা (01711-390039), রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট (01938-305706) হোটেল আল রহমান (01611-602108), হোটেল স্কাইপার্ক (01711-966903) উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন

শ্রীমঙ্গল শহরে খাবার জন্য ভালো মানের কয়েকটি খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। এর মধ্যে পানসী রেস্টুরেন্ট, পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট, সাতকরা রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য।

আরো পড়ুন