সিলেট জেলায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাত রংঙের চা (Seven color tea) সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তাই যারা শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে যায় তারা ছুটে আসেন শ্রীমঙ্গলের নীলকন্ঠ চা কেবিনের সাত রংঙের চা পান করতে। চায়ের প্রতিটি স্তরের আলাদা আলাদা স্বাদ পাওয়া যায় এবং বর্ণের দিক থেকে রংধনুর মতো বর্ণীল।
শ্রীমঙ্গলের রমেশ রাম গৌড় প্রায় ১২ বছর ধরে সাত রং চা বানিয়ে আসছেন। শ্রীমঙ্গলের মণিপুরী রামনগর ও কালিঘাট রোডের ১৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ানের ক্যান্টিনে “নীলকন্ঠ চা কেবিন” নামে তার দুইটি চায়ের দোকান আছে।
রমেশ রাম গৌড় জানান, তিনি নিজে সাত স্তরবিশিষ্ট এই চায়ের আবিষ্কার করেন। পূর্বে তিনি ময়মনসিংহ বসবাস করতেন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর অংশীদার ছিলেন। কিন্তু ব্যবসার পুরো টাকা তিনি আত্মসাৎ করে ভাগ্য বদলাতে ২০০০ সালে মাত্র ১,৫০০ টাকা সাথে নিয়ে পরিবার নিয়ে শ্রীমঙ্গল চলে আসেন।
শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) সংলগ্ন কাকিয়াছড়া চা বাগানে একটি চায়ের দোকান দেন। এরপর এক গ্লাসে দুই রঙের আবিষ্কার করে দেশ জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। এরপর থেকে ধীরে ধীরে স্তর বাড়াতে শুরু করেন। বর্তমানে চা সাত স্তরে এসে দাঁড়িয়েছে। এরপর থেকে দেশ জুড়ে তার চায়ের সুনাম অর্জন করে।
সাত রংঙের চায়ের মূল্য তালিকা
বর্তমানে রমেশ রাম গৌড়ের সাত স্তরের চা ৭০ টাকা, ছয় স্তরের চা ৬০ টাকা, পাঁচ স্তরের চা ৫০ টাকা, চার স্তরের চা ৪০ টাকা, তিন স্তরের চা ৩০ টাকা, দুই স্তরের চা ২০ টাকা, স্পেশাল দুধ চা ১০ টাকা, সাদা চা ১০ টাকা, হাই স্পেশাল চা ২০ টাকা, আদা চা ৫ টাকা, লেবু চা ৫ টাকা, গ্রিন চা ৫ টাকা বিক্রি করছেন।
সাত রংঙের চা খেতে কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে চড়ে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ পরিবহন (01713-201732), এনা পরিবহন (01958-135148), শ্যামলী পরিবহন (02-7550071), বিআরটিসি পরিবহন (41051337) সহ অন্যান্য পরিবহনে চড়ে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। ঢাকা টু শ্রীমঙ্গল নন-এসি বাস ভাড়া ৫৭০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ১,০০০ টাকা।
কমলাপুর রেলস্টেশন উপবন এক্সপ্রেস প্রতি বুধবার বাদে রাত ১০ টায়, কালনী এক্সপ্রেস প্রতি শুক্রবার বাদে দুপুর ২ টা ৫৫ মিনিটে, পারাবত এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গলবার বাদে সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে এবং জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গলবার বাদে সকাল ১১ টা ১৫ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনের সিট ভেদে ভাড়া ২৪০ থেকে ৮২৮ টাকা। সিলেট থেকে যেকোনো ট্রেনে চড়ে শ্রীমঙ্গল আসতে পারবেন।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে কালিঘাট রোডের কিছুদূর গেলে দেখতে পাবেন রাস্তার পাশে বড় সাইনবোর্ডে লেখা “নীলকন্ঠ চা কেবিন”। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ১৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের ক্যান্টিনের পাশে চা কেবিন থাকায় নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি নেই।
রমেশ রাম গৌড়ের দ্বিতীয় সাত রংঙের চা নীলকন্ঠ চা কেবিন রামনগর অবস্থিত। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা নিয়ে একই রোড দিয়ে যেতে হবে। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। চা বাগানের মধ্যে নিরিবিলি চমৎকার পরিবেশে চা পান করতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য শ্রীমঙ্গলে ভালো মানের রিসোর্ট রয়েছে। এছাড়া চা বাগানের ভিতর বা পাশে সরকারি বেসরকারি অনেক কটেজ ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। চাইলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশে গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট (01552-683454) এ থাকতে পারেন।
এছাড়া শ্রীমঙ্গল শহরে মোটামুটি মানের অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল মেরিনা (01787-333544), হোটেল মহসিন প্লাজা (01711-390039), রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট (01938-305706) হোটেল আল রহমান (01611-602108), হোটেল স্কাইপার্ক (01711-966903) উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
শ্রীমঙ্গল শহরে খাবার জন্য ভালো মানের কয়েকটি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। এর মধ্যে পানসী রেস্টুরেন্ট, পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট, সাতকরা রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য।
আরো পড়ুন
- শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
- একদিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ
- শমশেরনগর গলফ মাঠ
- শ্রীমঙ্গল চিড়িয়াখানা
- শ্রীমঙ্গল চা বাগান
- চা জাদুঘর